বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:১৬ অপরাহ্ন
পারভেজ রানা, বিশেষ প্রতিনিধি: প্রলংয়কারী ঘূর্ণিঝড় সিডর। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর দেশের দক্ষিণাঞ্চলে। বেশ কয়েকটি জেলাকে লন্ডভন্ড করে দেয় কয়েকটি জেলাকে। হাজারো মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয় ঘূর্ণিঝড়টি। ভয়াল সিডরের ১৭ বছর পার হলেও ঘূর্ণিঝড়টির স্মরণে চোখে আসে জল। বরগুনার অপেক্ষাকৃত দুর্যোগ ঝুঁকিপূর্ণ নদী ভাংগন এলাকাগুলোতে এখনো নির্মিত হয়নি টেকসই বাঁধ। এরমধ্যে অনেক জায়গায় বেড়ীবাঁধ নির্মাণের কাজ চলমান থাকলেও নির্মাণ চলছে ধীরগতির। নির্মিত হয়নি পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র। যা আছে অনেকটাই আবার দূর্যোগের সময় হয়ে পড়ে বসবাসের অনুপযোগী।
২০০৭ সালের ১৪ নভেম্বর সন্ধ্যার মধ্যেই ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রগুলো মানুষে মানুষে ভরে যায়। পরদিন সকালে বৃষ্টিবাদল না থাকায় নির্ঘুম রাত কাটানো মানুষের অনেকেই নিজের বাড়ি ফিরে যায়। ইতিমধ্যে একটু জিরিয়ে নিয়ে সিডর আবার শক্তি সঞ্চয় করে আরও দুর্বার হয়ে ওঠে। সকাল শেষে ১৫ নভেম্বর ঘোষণা আসে সিডর নামের ঘূর্ণিঝড় ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে বাংলাদেশের উপকূলে। দুপুর নাগাদ তা বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করবে। সকালে বাড়ি ফিরে যাওয়া মানুষের কাছে এ ঘোষণা রাখাল বালকের চিৎকার বলে মনে হয়েছিল। তাই অনেকেই আবার বাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার কথা ভাবেননি।
সন্ধ্যার পর থেকে রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঝড়ের গতি বাড়তে থাকে। রাত ঠিক তখন নয়টা বরগুনার পাথরঘাটায় বলেশ্বর নদের কাছে উপকূল অতিক্রম করে। সিডরের আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে যায় বরগুনা সহ খুলনা বিভাগের উপকূলীয় অঞ্চল। ধ্বংসযজ্ঞ চলে বাগেরহাট, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, ভোলা, সাতক্ষীরা, লক্ষ্মীপুর, ঝালকাঠিসহ দেশের প্রায় ৩১টি জেলায়।
স্মরণকালের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘূর্ণিঝড় সিডর মাত্র আধাঘণ্টায় তান্ডব চালিয়ে বরগুনা সহ দেশের গোটা দক্ষিণাঞ্চলকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে দেয়। লন্ডভন্ড করে দেয় উপকূল। প্রবল তরে পানি উপচে পড়ে এবং বেড়ীবাঁধ ভেংগে পানি ঢুকে মুহূর্তে চেনা জনপদ পরিণত হয় অচেনা এক ধ্বংসস্তূপে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী বরগুনা জেলা এক হাজার তিনশত পয়তাল্লিশ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছিল। এখনো নিখোঁজ রয়েছে একশত ছাপ্পান্ন জন। বেসরকারি হিসাব মতে নিহতের সংখ্যা প্রায় দুই হাজার। আহতের সংখ্যা আঠাশ হাজার পঞ্চাশ। দুই লাখ তের হাজার ৪শত ৬১টি পরিবারের আংশিক ক্ষতি হলেও সাতাত্তর হাজার চারশত ৫৪টি ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। ফসলের ক্ষতি হয়েছে দুই লাখ তেতাল্লিশ হাজার তিনশত তিরানব্বই একর। গবাদি পশু মারা গেছে ত্রিশ হাজার চারশত নিরানব্বইটি। ক্ষতিগ্রস্হ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একহাজার দুইশত পয়ত্রিশ। ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৪২০ কিলোমিটার রাস্তা। একহাজার সাতশত সাতানব্বই মিটার ব্রিজ ও কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অধিকাংশ এলাকায় সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দেয়।
সিডর আক্রান্ত এলাকায় জায়গার অভাবে গণকবর দিতে হয়। অনেক লাশের কোনো পরিচয়ও পাওয়া যায়নি। কাপড়ের অভাবে অনেক মরদেহ পলিথিনে মুড়িয়ে দাফন করা হয়। ঘটনার এক মাস পরেও ধানখেত, নদীর চর, বেড়ীবাঁধ, গাছের গোড়া আর জঙ্গলের নানা আনাচকানাচে থেকে লাশ, লাশের অংশবিশেষ অথবা কঙ্কাল উদ্ধার হয়। কেউ কেউ সিডর আঘাত হানার অনেক দিন পর স্বজনদের কাছে ফিরেও আসেন। স্মৃতি হারিয়ে অনেকেই আর গ্রামের বাড়ি খুঁজে পাননি। ফিরতে পারেননি।