বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৬ অপরাহ্ন
হারুন অর রশিদ, বিশেষ প্রতিনিধি:
খাদ্যে উদ্বৃত্ত জয়পুরহাটের কালাই উপজেলা। এই উপজেলা উৎপাদিত প্রধান ফসলগুলোর মধ্যে ধান অন্যতম। বর্তমান উপজেলার বিভিন্ন মাঠে এখন রোপাআমন ধানের সোনালী শীষ দোলা দিচ্ছে। পোকামাকড় ও বিভিন্ন ধরনের রোগবালাইয়ের আক্রমণ ছাড়াই বেড়ে ওঠা সোনালী ধানের শীষে ভরে গেছে মাঠ। দিগন্ত মাঠে সোনালী ফসলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে আরও বিকশিত করে তুলেছে। কৃষকের আগামীর সোনালী স্বপ্ন লুকিয়ে আছে সোনালী ধানখেতের মাঝে। রোপাআমন ধানের প্রতিটি শীষে যেন কৃষকের জীবনের স্বপ্ন ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কালাই পৌরসভাসহ উপজেলার মাত্রাই, উদয়পুর, পুনট, জিন্দারপুর ও আহম্মেদাবাদ ওই ৫টি ইউনিয়নে বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে এখন রোপাআমন ধান গাছের শীষের প্রাচুর্যে সোনালী সমারোহ। উপজেলার মাঠ জুড়ে নজর কাড়ছে রোপাআমন ক্ষেত। চারিদিকে এক নয়নাভিরাম দৃশ্য। এর মধ্যেই সোনালী ধানের শীষে ঝলমল করছে মাঠের পর মাঠ। কয়েক দিনের পরেই রাশি রাশি সোনালী ধানে ভরে উঠবে কৃষকের শূন্য গোলা। পাশাপাশি কৃষকের মুখে ফুটে উঠবে হাসি। তবে কিছু কিছু মাঠে আগাম জাতের আমন ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। আগাম জাতের এ ধানগুলোর নাম: বীনা ধান-৭ এবং বীনা ধান-১৭। এজাতের ধানগুলোর কাটা মাড়াইয়ের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। বাকী জাতের ধানের কিছু দিন পরেই তাদের স্বপ্নের ফসল ঘরে উঠবে এমন আশায় তাদের মনে দোলা দিচ্ছে অনাবিল আনন্দ। রোপাআমন ধানের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসির ঝিলিক।
কালাই উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এই উপজেলায় প্রাকৃতিক ভাবে তেমন কোন দুর্যোগ না হওয়ায় এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার চলতি রোপাআমন মৌসুমে ১১হাজার ৯শ ৫০হেক্টর জমিতে বোরো ধান রোপন হয়েছে। এর মধ্যে উপজেলায় হাইব্রিড জাতের ধান রোপন হয়েছে ৮শ ৫০ হেক্টর জমিতে এবং উফশী জাতের ধান রোপন হয়েছে ১১হাজার ১শ হেক্টর জমিতে। ইতিমধ্যে আগাম জাতের ধান কাটা শুরু হয়েছে।
উপজেলার উদয়পুর ইউনিয়নে বহুতী গ্রামের কৃষক মো.আনিসুর বলেন, এবার সাত বিঘা জমিতে ধান রোপন করেছি। ইতিমধে ধান কাটা শুরু করেছি, ফলনও ভালোই হয়েছে। বর্তমান ধানের দামও ভালো, আশা করি বাজারে ধানের দাম ভালো পাবো।
উপজেলার মাত্রাই গ্রামের কৃষক রানা বলেন, এবছর আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবং বিদুৎ ও সারের কোনো সংকট ছিলোনা। যে কারণে ফসলের চেহারা অনেক সুন্দর হয়েছে। ধানের চারাগুলো দেখে মনে হয় ধানের ব্যাপক ফলন হবে।
উপজেলার জিন্দারপুর ইউনিয়নের কৃষক কাশেম বলেন, আমার ধানক্ষেতে রোগ-বালাই এবার অনেক কম ছিলো। আবহাওয়া ভালো ছিলো,ধান কাটা পর্যন্ত এমন আবহাওয়া থাকলে বাম্পার ফলনের আশা করছি।
উপজেলার মাত্রাইহাটের ধান ব্যবসায়ী ভকু বলেন, গত হাটে ভালো ধান আমদানি শুরু হয়েছে। বর্তমান বাজারে ধানের দাম ভালো আছে। আশা করছি দু-চার দিনের মধ্যে পুরোদমে ধান আমদানি শুরু হবে।
এই বিষয়ে কালাই উপজেলার কৃষি অফিসার কৃষিবিদ অরুণ চন্দ্র রায় বলেন, উপজেলায় ইতিমধ্যে আগাম জাতের ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। ফলনও অনেক বাম্পার হচ্ছে। যেসব মাঠের জমির ধান ৯০ ভাগ পেঁকে গেছে ওইসব জমির ধান দ্রæত কেটে নিতে আমরা কৃষককে সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিচ্ছি। তাছাড়া আমাদের মাঠ পর্যায়ে কৃষি উপসহকারী কর্মকর্তাগণ কৃষক পর্যায়ে নানা ধরণের পরামর্শ দিয়ে আসছেন। কৃষকের ঘরে ধান তোলা পর্যন্ত এ সেবা অব্যাহত থাকবে। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ না হলে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।