বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫৭ অপরাহ্ন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আব্দোল্লাহিয়ান রোববারের হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন।
তাদের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে ইরানের মন্ত্রিসভা এক বিবৃতিতে বলেছে, ইরানি জাতির জন্য নিজের ‘জীবন উৎসর্গ’ করেছেন ইব্রাহিম রাইসি। তার দেখানো পথেই ইরান থাকবে।
রোববার আজারবাইজান সীমান্তবর্তী এলাকায় আরাস নদীর ওপর একটি বাঁধ প্রকল্প উদ্বোধনের পর উত্তর-পূর্বাঞ্চলের শহর তাবরিজে ফিরছিলেন রাইসি এবং তার সফরসঙ্গীরা। ঘন কুয়াশার মধ্যে হেলিকপ্টারটি পার্বত্যাঞ্চলে দুর্ঘটনায় পড়ে।
এরপর ৪০ জনের বেশি উদ্ধারকর্মী, অনুসন্ধানী কুকুর এবং ড্রোন দিয়ে শুরু হয় বড় ধরনের উদ্ধার অভিযান। কিন্তু দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় কুয়াশার মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে উদ্ধারকর্মীদের বেগ পেতে হয়।
পরে সোমবার সকালে উদ্ধার অভিযানে যোগ দেওয়া একটি তুর্কি ড্রোন ‘হিট সোর্স’ শনাক্ত করলে দুর্ঘটনাস্থলের অবস্থান সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। কিন্তু পাহাড়ের উপরে হেলিকপ্টারের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়ার পর ইরানের রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির প্রধান হোসেইন কোলিভান্দ বলেন, দুর্ঘটনাস্থলে প্রাণের কোনো চিহ্ন মেলেনি।
রয়টার্স লিখেছে, বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারটি পুড়ে পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। ড্রোন থেকে তোলা বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারের ছবিও প্রকাশ করা হয়েছে ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে।
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারের ধ্বংসাবশেষ
দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনের খবরে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট রাইসি এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দোল্লাহিয়ানসহ ওই হেলিকপ্টারে থাকা কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাও মারা গেছেন।
৬৩ বছর বয়স্ক রাইসি দ্বিতীয়বারের চেষ্টায় ২০২১ সালে ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। রোববার দুর্ঘটনার পর তাকে জীবিত উদ্ধারের আশা ফিকে হতে থাকলে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি ইরানিদেরকে উদ্বিগ্ন হতে বারণ করেন। দেশের কাজে কোনো বিঘ্ন ঘটবে না বলে সবাইকে আশ্বস্ত করেন। রাইসির জন্য সবাইকে দোয়া করারও আহ্বান জানান।
ইরানের আধা-সরকারি বার্তা সংস্থা ফারসেও ইব্রাহিম রাইসির জন্য দোয়া করতে বলা হয়। রাষ্ট্রীয় টিভিতে আসা ভিডিওতে মাসাদ শহরে মানুষজনকে প্রেসিডেন্টের জন্য দোয়া করতেও দেখা যায়।
হেলিকপ্টারে আরও যারা ছিলেন
হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইরানের প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও আরও কয়েকজনের প্রাণ গেছে।
রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আইআরএনএ’র বরাতে বিবিসি জানিয়েছে, রাইসির সঙ্গে তাবরিজ শহরের জুমার নামাজের ইমাম আয়াতুল্লাহ মোহাম্মদ আলি আল-ই হাশেম এবং পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের গভর্নর জেনারেল মালেক রহমাতিও ছিলেন।
এছাড়া প্রেসিডেন্টের সুরক্ষায় নিয়োজিত ইউনিটের কমান্ডার সরদার সাইয়্যেদ মেহদি মুসাভিও নিহত হয়েছেন। এছাড়া কয়েকজন বডিগার্ড ও হেলিকপ্টার ক্রুও রয়েছে যাদের নামা এখনেও জানা যায়নি।
ইরানের আধা-সরকারি সংবাদ সংস্থা তাসনিম নিউজ লিখেছে, প্রেসিডেন্ট রাইসিসহ অন্যদের লাশ উদ্ধার করে তাবরিজে নেওয়া হচ্ছে।
অ্যাম্বুলেন্সে করে মরদেহগুলো তাবরিজের কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে ইরানের রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির প্রধান হোসেইন কোলিভান্দ জানিয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট রাইসি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মৃত্যুর আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পর সোমবার সকালে জরুরি বৈঠকে বসে ইরানের মন্ত্রিপরিষদ। পরে তারা একটি বিবৃতি দেন। প্রেসিডেন্ট ও তার সফরসঙ্গীদের মৃত্যুতে বিবৃতিতে শোক জানানো হয়। প্রেসিডেন্টের মৃত্যুতে প্রশাসনিক কোনো কাজে ব্যাঘাত ঘটবে না বলেও জনগণকে আশ্বস্ত করা হয়।
অন্তবর্তী প্রেসিডেন্ট কে
প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুতে সংবিধান অনুযায়ী ইরানি অন্তবর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হতে পারেন দেশটির প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবার।
ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ইরানের সংবিধানের ১৩১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, দায়িত্বরত কোনো প্রেসিডেন্ট মারা গেলে ভাইস প্রেসিডেন্ট দায়িত্বগ্রহণ করবেন। ফলে নিয়ম অনুযায়ী ৬৮ বছর বয়সী মোখবারই অন্তবর্তী প্রেসিডেন্ট হওয়ার কথা।
তবে সেজন্য সর্বোচ্চ নেতা আলী খামেনির অনুমোদন প্রয়োজন হবে।
দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় কোনো প্রেসিডেন্ট মারা গেলে ৫০ দিনের মধ্যে নতুন প্রেসিডেন্ট বেছে নিতে নির্বাচন আয়োজন করে থাকে ইরানের তিন সদস্যের একটি পরিষদ। সেখানে প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট মোখবার ছাড়াও রয়েছেন পার্লামেন্টের স্পিকার ও বিচার বিভাগের প্রধান।
ইব্রাহিম রাইসির মতই ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আলী খামেনির ঘনিষ্ঠ মোখবার জন্মগ্রহণ করেন ১৯৫৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর। ২০২১ সালে তিনি প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট হন। আর রাইসি প্রেসিডেন্ট হন ইরানের।