বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৬ অপরাহ্ন
খলিলুর রহমান: শবে বরাত শব্দটি এসেছে ফারসি শব্দ থেকে। এবং শবে বরাতকে আরবিতে লাইলাতুল বারাআত বলা হয়। আর হাদিস শরিফে শবে বরাতকে বলা হয়েছে নিসফ শাবান বা শাবান মাসের মধ্য দিবসে রজনী। আর এই শবে বরাত এ প্রত্যেক মুসলমান ব্যক্তির নফল নামাজ আদায় করে থাকে।
আর নফল ইবাদতের মধ্যে সবথেকে শ্রেষ্ঠ ইবাদত হচ্ছে নামাজ। এই শবে বরাতের রাতকে কেন্দ্র করে প্রত্যেক মুসলমান মহান আল্লাহ তাআলার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকেন। বিভিন্ন মনের ইচ্ছা আকাঙ্ক্ষা সম্পর্কে দোয়া করে থাকেন। তবে একটি বিষয় সকল মুসলিমদের স্পষ্ট অবগত থাকা উচিত। তা হচ্ছে শবে বরাতের নামাজ কত রাকাত।
শবে বরাতের নামাজ কত রাকাত
অনেকেই অনলাইনে এসে শবে বরাতের রাকাত সম্পর্কে প্রশ্ন করে থাকেন। কিন্তু শবে বরাতের নামাজের কোন নির্দিষ্ট রাকাত নেই। একজন ব্যক্তি তার সাধ্য অনুযায়ী শবে বরাতের রাত্রিতে মহান আল্লাহ তাআলার জন্য ইবাদতের নফল নামাজ আদায় করবেন। অর্থাৎ অন্যান্য নফল নামাজের মত শবে বরাতের রাত্রিতে দু’রাকাত করে নামাজ আদায় করবে।
এবং অন্যান্য নফল নামাজে প্রথম রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে যেমন অন্যান্য সূরা মিলিয়ে যেমন নামাজ পড়া হয়। ঠিক তেমনি শবে বরাতের রাত্রিতে নফল নামাজ হিসেবে একই ভাবে সুরা ফাতেহার সাথে যে কোন সূরা মিলিয়ে নামাজ পড়তে হয়। তবে আমলের দিক দিয়ে দু’রাকাত, চার রাকাত এবং ৮ রাকাত এমনকি ২০ রাকাত পর্যন্ত আপনি নামাজ পড়তে পারেন।
শবে বরাতের নামাজ কয় রাকাত কিভাবে পড়তে হয়?
আপনি যদি একজন মুসলমান হয়ে থাকেন। তাহলে অবশ্যই এই লাইলাতুল বরাতের এই মহিমান্বিত রাত্রিতে অনেক বেশি ইবাদত করে থাকবেন। তবে দুই রাকাত করে চার রাকাত পর্যন্ত কিভাবে নামাজ আদায় করতে হয়। এবং প্রত্যেক রাকাতে কি কি সূরা পড়ে নামাজ আদায় করলে আরো বেশি সওয়াবের হয় তা বিস্তারিত জানতে নিচের তালিকা গুলো লক্ষ্য করুন।
শবে বরাতের নিদিষ্ট কোনো রাকাত সংখ্যা নেই। তবে দুই রাকাত নামাজে প্রথম রাকাত এবং দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ফাতেহা সাথে যে কোন সূরা পড়তে পারেন।
৮ রকাত নফল নামাজ, এতে এখানে দুই রাকাত দুই রাকাত করে পড়তে হবে। নিয়ম হচ্ছেঃ সূরা ফাতিহার পর, সূরা এখলাছ ৫ বার করে দুই রাকাত দুই রাকাত করে ৮ রাকাত শেষ না হওয়া পর্যন্ত পড়তে হবে।
১২ রাকাত নফল নামাজ, দুই রাকাত দুই রাকাত করে। এখানেও নিয়ম হচ্ছেঃ প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার পর ১০ বার সূরা এখলাছ এবং এই নিয়মে বাকি নামায শেষ করা।
১৪ রাকাত নফল নামাজ, ২ রাকাত ২ রাকাত করে। এতে করে এর নিয়ম হচ্ছেঃ প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার পর যে কোন একটি সূরা পড়বেন।
শবে বরাতের নফল নামাজ কত রাকাত
প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) পবিত্র এই রজব মাসে বেশি বেশি নফল নামাজ ও নফল রোজা রাখতেন। শবে বরাতের নির্দিষ্ট কোন নামাজ পড়ার হাদিস নেই। ২ রাকাত করে নফল নামাজ আদায় করা যেতে পারে। এবং প্রত্যেক রাকাতে নামাজ আদায় করার সময় সূরা ফাতিহার সাথে ইচ্ছামত যে কোন সূরা পাঠ করে নামাজ আদায় করা যায়। অতএব দুই রাকাত দুই রাকাত করে সর্বনিম্ন ১২ রাকাত নফল নামাজ পড়া উত্তম। অর্থাৎ সঠিক উত্তর হচ্ছে শবে বরাতের নফল নামাজ ন্যূনতম দুই রাকাত।
শবে বরাতের নামাজের নিয়ত
দুই রাকাত শবে বরাতের নফল নামাজের নিয়ত বাংলাতে মুখে মুখে অথবা আরবিতে উচ্চারণ করে বলতে পারেন। তবে আল্লাহু আকবার তাকবীর বলে অবশ্যই নামাজের নিয়ত করতে হবে। এক্ষেত্রে বাংলায় আপনি এভাবে নিয়ত করতে পারেনঃ আমি কিবলামুখী হয়ে শবে বরাতের দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করতেছি আল্লাহু আকবার।
এছাড়াও আরবিতে চাইলে উচ্চারণ করে শবে বরাতের নামাজের নিয়ত করতে পারেন। আরবি নিয়তটি হচ্ছেঃ নাওয়াইতুআন্ উছল্লিয়া লিল্লা-হি তাআ-লা- রাকআতাই ছালা-তি লাইলাতিল বারা-তিন্ -নাফলি, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা-জিহাতিল্ কাবাতিশ্ শারীফাতি আল্লা-হু আকবার।
শবে বরাতের নামাজ কখন পড়তে হয়
শাবান মাসের ১৪ তারিখ এবং ১৫ তারিখ মধ্যরাত্রিতে শবে বরাত পালন করা হয়। অর্থাৎ শাবান মাসের ১৪ তারিখ মাগরিবের পর হতে আপনি শবে বরাতের নামাজ আদায় করতে পারেন। তবে শবে বরাতের নামাজ আদায় করা হয় এশার ফরজ নামাজ শেষে সুন্নত নামাজের পর। দুই রাকাত করে ইচ্ছামতা একজন ব্যক্তি শবে বরাত নামাজ আদায় করতে পারেন।
শেষ কথা
এই শবে বরাতের নামাজ কত রাকাত তা নির্দিষ্ট করে বলা অসম্ভব। এক কথায় উত্তর হচ্ছে শবে বরাতের নামাজের কোন নির্দিষ্ট রাকাত নেই। সারারাত অর্থাৎ ফজরের আগ পর্যন্ত একজন ব্যক্তি চাইলে তার ইচ্ছামতো রাকাত পড়তে পারেন। তবে অবশ্যই সারা রাত্রি নফল নামাজ আদায় করার পর ফজরের নামাজ জামাতের সাথে আদায় করবেন।