1. admin@dailyoporadhonusondhanltd.net : admin :
শিরোনামঃ
নোয়াখালী জেলার সুধারাম থানার চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার এজাহারনামীয় পলাতক আসামি মোঃ রায়হান’কে চট্টগ্রামের পটিয়া থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৭ ও র‌্যাব-১১। সীতাকুণ্ডে মহাসড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ যানজট সৈনিক কল্যাণ সংস্থা Uno নিকট খেজুরের বীজ প্রদান বাংলাদেশ গ্রাম ডাক্তার কল্যাণ সমিতি চট্টগ্রাম জেলা শাখা কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠান ও মাস ব‍্যাপি সাংগঠনিক কর্মসূচি 2024 সম্পন্ন। বরগুনার তালতলীতে অবৈধ চোলাই মদসহ আটক ১ জন। “শিক্ষায় কিন্ডারগার্টেন শিক্ষকদের আন্তরিকতা প্রশংসনীয়”– “শিক্ষায় কিন্ডারগার্টেন শিক্ষকদের আন্তরিকতা প্রশংসনীয়” শেরপুরের ঝিনাইগাতী তিনজন হোটেল মালিককে ৬ হাজার টাকা জরিমানা ২ কেজি গাঁজা সহ এক মাদক ব্যবসায়ী বরগুনা ডিবি পুলিশের হাতে আটক।

পুলিশের ‘বিশেষ শাখা’তে যাচ্ছেন গোপালগঞ্জের প্রথম নারী পুলিশ সুপার আয়েশা সিদ্দিকা বিপিএম পিপিএম

  • আপডেট সময়ঃ মঙ্গলবার, ৪ জুলাই, ২০২৩
  • ১০৮ জন দেখেছেন

ফকির মিরাজ আলী শেখ, বিশেষ প্রতিনিধি,গোপালগঞ্জ থেকে: গোপালগঞ্জে প্রথম নারী পুলিশ সুপার পদে গত ০২ বছর ০৬ মাস আগে আয়েশা সিদ্দিকা গোপালগঞ্জ জেলায় পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করেছিলেন। একজন নারী হিসেবে পুলিশের মত চ্যালেঞ্জিং পেশায় এমন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনে তিনি কেমন করবেন- এ বিষয়ে ছিল সাধারণ মানুষের চুল চেরা বিশ্লেষণ। কারণ তখন সারা বাংলাদেশেই এটি বিরল ঘটনা ছিল। অনেকের ভাবনায় ছিল, বিষয়টি সহজ হবে না! তার মধ্যেই তিনি আবার এসেই সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়ের সময় ঘোষনা করলেন-

 

“সহজেই পুলিশের সেবা পাবেন গোপালগঞ্জবাসী!” কথা আর কাজে মিল রাখতে শুরু হলো তাঁর দিন রাত এক করে পরিশ্রম করা। অল্প দিনে তিনি থানায় থানায় বিশেষ সভা ডাকলেন; ওপেন হাউজ ডে, বিট পুলিশিং সভা করে সব এলাকায় আপামর জনসাধারণের কাছে গেলেন। জেলার সব লোক জেনে গেলেন একজন নতুন পুলিশ সুপার এসেছেন, যিনি একজন নারী অফিসার কিন্তু তাকে নারী বা পুরুষ এর কাতারে না ফেলে একজন জনসেবায় নিয়োজিত দক্ষ পরিশ্রমী অফিসার ভাবা-ই শ্রেয় হবে। অল্পদিনেই সবাই বুঝলো তাঁকে দিনে রাতে যে কোন সময় ফোন এ পাওয়া যায়; তিনি সহজেই দাঁড়িয়ে যান অসহায়, বঞ্চিত ও অত্যাচারিত মানুষের পাশে। মানুষ এটাও বুঝে গেলো তাঁর কাছে সহজে যেমন পৌঁছানো যায়, সহজে সেবা দানে তিনি যেমন বদ্ধপরিকর তেমনিভাবে মিথ্যা অভিযোগ ও দালাল শ্রেণির বিরুদ্ধেও তিনি সমানভাবে কঠিন।

 

এর মধ্যে যোগদানের পরপরই ২০২১ এ বিশ্বব্যাপী শুরু হলো ভয়ংকর করোনা ভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ। জনসাধারণকে ভ্যাকসিন প্রয়োগ, মাস্ক পড়ানো- ইত্যাদি প্রতিরোধ মূলক কাজে সচেতন করতে নিত্যদিন তিনি পুলিশ সদস্যদের নিয়ে মাঠে-ঘাটে-রাস্তায় সময় কাটালেন। সরকার ঘোষিত লকডাউন কার্যকরের স্বার্থে প্রয়োজনে কোথাও কঠোর ভূমিকা রাখলেন। একই সাথে রাতের অন্ধকারে, দিনের আলোয় যখন যেখানে কর্মহীন, অসহায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, পথশিশু বা খাবার সংকটে পড়া মানুষের সন্ধান পেয়েছেন সেখানেই সাধ্যমত খাদ্য সামগ্রী নিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন তাদের। জেলা পুলিশের অভিভাবক হিসেবে সম্মুখ যোদ্ধা পুলিশ সদস্যদের মনোবল চাঙা রাখতে তাদের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যায় অক্সিজেন সিলিন্ডার সংগ্রহ করেছেন। প্রয়োজনে দ্রুততার সাথে উন্নত চিকিৎসার স্বার্থে তাদের রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে পাঠিয়েছেন।

 

করোনার প্রকোপ কমে যাওয়ার পর তিনি পুলিশিং এ অধিকতর মনোযোগ দেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন, অল্প সময়ে কিভাবে নিত্য নতুন পদ্ধতিতে পুলিশের সেবাগুলো মানুষের কাছে পৌঁছানো যায় সে চেষ্টায় অবিচল থেকেছেন। তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বিশেষ অভিযানের মাধ্যমে শুধু একটি থানা-ই এক মাসে ০৭ টি পর্যন্ত মৃত্যদন্ড সাজাপ্রাপ্ত আসামি গ্রেফতার করে বাংলাদেশ পুলিশের মাননীয় আইজিপি মহোদয়ের কাছে ১ লক্ষ টাকা বিশেষ অর্থ পুরস্কার পেয়েছেন। জিডি ও মামলা তদন্তের ক্ষেত্রে আধুনিক সকল প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিতকরণের জন্য সব ব্যবস্থা নিয়েছেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে খুন-ডাকাতি-দস্যুতা বা গণধর্ষণ এর মতো গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু ক্লু-লেস মামলার রহস্য উদঘাটন করেছেন; মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি প্রয়োগ করে অব্যাহত বিশেষ অভিযান পরিচালনা করেছেন। অনলাইন তৎপরতার মাধ্যমে দ্রুত পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, পাসপোর্ট ভিআর, চাকরির ভেরিফিকেশন, ভেটিং সহ সকল ক্ষেত্রে একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়া চালু করে সুনাম কুড়িয়েছেন। একই সাথে সড়কে মৃত্যুর মিছিল রোধ করতে কখনো নিজেও যুক্ত হয়েছেন ট্রাফিক অভিযানে, কখনো যুক্ত করেছেন জেলা প্রশাসক মহোদয় কিংবা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে। ট্রাফিক সার্জেন্টদের বডি ওর্ন ক্যামেরার ব্যবহার এর মাধ্যমে ট্রাফিক অভিযানে স্বচ্ছতা এনেছেন, জনসচেতনতা বাড়িয়ে দূর্ঘটনা প্রতিরোধে অগ্রনী ভূমিকা রেখেছেন।

 

তিনি রোটারি ক্লাব, বিসিএস উইমেন নেটওয়ার্ক, চক্ষু হাসপাতাল ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান; কিংবা জাতীয় আন্তর্জাতিক এনজিও এর কারিগরি সহযোগিতা নিয়ে জনকল্যাণমুখী বিভিন্ন ক্যাম্পেইন করেছেন। তীব্র শীতের সময় সারাদিনের কাজের ক্লান্তি ভুলে শীতার্ত ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দুঃখ কষ্ট অনুভব করে তাদের জন্য গভীর রাতে প্রত্যন্ত এলাকায় ছুটে গেছেন শীতবস্ত্র হাতে নিয়ে। মানবিক কর্মকান্ডে সবার মাঝে একটি আস্থা অর্জন করায় জেলার প্রতিবন্ধী, সুবিধা বঞ্চিত নারী-শিশু সহ বিপদগ্রস্থ অনেকেই তাঁর দ্বারস্থ হয়েছেন। সাধ্যমতো নিজে কিংবা কোন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সামাজিক দায়িত্ব পালনের বিষয়ে উপলব্ধি করিয়ে এদের মাধ্যমে অনেকের লেখাপড়া বা অক্ষম হলে ভরনপোষণ এর দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছেন, কাউকে দোকান করে দিয়ে বা গবাদি পশু ক্রয় করে দিয়ে স্বাবলম্বী করার চেষ্টা চালিয়েছেন। তিনি জনগণের এত কাছে পৌঁছাতে পেরেছিলেন যে আমরা দেখেছি আত্মহত্যার সময়েও একজন কিশোরী জেলার পুলিশ সুপারকে মোবাইল ফোনে কল দিয়ে তার অভিমানের কথা বলতে চায়! আবার তারই তড়িৎ পদক্ষেপের কারণে সে কিশোরীকে প্রাণে বাঁচানো সম্ভব হয়। এ ঘটনায় সর্ব মহলে পুলিশ সুপার হিসেবে তিনি প্রশংসিত হয়েছেন। বিভিন্ন সময়ে তিনি স্কুল কলেজ পরিদর্শন করে ছাত্রছাত্রীদের মাঝে মাদক, ইভটিজিং, বাল্যবিবাহ ও আত্মহত্যার মতন সামাজিক সমস্যার বিষয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়েছেন। এ সচেতনতা বৃদ্ধি প্রোগ্রাম সমূহের মাধ্যমে তিনি তরুণ ও কিশোর-কিশোরীদের আদর্শে পরিনত হতে পেরেছেন। ইভটিজার ও কিশোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে সময়ে সময়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করেন। ছাত্রীদেরকে তিনি একটি বিশেষ স্লোগানে উজ্জীবিত করেছেন,

 

“আমরা নারী-আমরা সব পারি।”

এছাড়া বৈশ্বিক মন্দার সময়ে তিনি জেলা পুলিশের সকল ইউনিট ও অফিসে সংরক্ষিত পতিত জমিতে বিভিন্ন ধরনের সবজি ও ফসল চাষ করিয়েছেন; পুকুর গুলোতেও করিয়েছেন মাছের চাষ। এটি সবার জন্য উদাহরণ সৃষ্টি করে এবং একাধিক জাতীয় ও স্থানীয় পত্র- পত্রিকায় ফলাও করে এ সাফল্য প্রকাশিত হয়। তিনি টানা দুই বছর গোপালগঞ্জ জেলা পুলিশে মাত্র ১০০ টাকা ফি-তে সম্পূর্ণ দুর্নীতিমুক্ত, স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ কার্যক্রম দক্ষতার সাথে পরিচালনা করেন এবং যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ দিয়ে ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করেন। তিনি ২০২২ সালের ১৫ জুন গোপালগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রশাসন ও অন্যান্য সংস্থার সাথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ঘনত্ব বিচারে দেশের সবচেয়ে বেশি পূজামণ্ডপ রয়েছে গোপালগঞ্জ জেলায়। সার্বজনীন দূর্গাপূজা, লাখো ভক্তের সমাবেশ ওড়াকান্দি ঠাকুর বাড়ির মেলা, খ্রিস্টান ধর্মের বড়দিনের মত অনুষ্ঠান সহ সকল ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে এ জেলার যে অসাম্প্রদায়িক ও এসব অনুষ্ঠানে সর্বসাধারণের অংশগ্রহণ মূলক চেতনা রয়েছে তা সমুন্নত রাখেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী গোপালগঞ্জ জেলার ওড়াকান্দি ঠাকুরবাড়ি সংলগ্ন হিন্দুদের মতুয়া সম্প্রদায়ের তীর্থস্থান সফর করেন। এ সময় ব্যা

পক নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করার দায়িত্ব পড়ে গোপালগঞ্জ জেলা পুলিশের ওপরে। দেশের বিভিন্ন জেলা হতে দক্ষ অফিসারগণ তাঁর নেতৃত্বে সফলভাবে স্মরণ কালের সবচেয়ে জনবহুল এ ভিভিআইপি ডিউটি সম্পন্ন করেন। একই সাথে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর জন্ম শতবার্ষিকী

এসময় কালে ২৫ জুন ২০২২ দেশের সর্ব বৃহৎ মেগা প্রজেক্ট তথা দক্ষিন এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ সেতু পদ্মা বহুমুখী সেতু উদ্বোধন করা হয়। এর ফলে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাংশ যুক্ত হয় ঢাকা চট্টগ্রামের সাথে, উন্মোচিত হয় সম্ভাবনার নতুন দ্বার। গোপালগঞ্জ জেলার প্রায় ৮০ কিমি হাইওয়েতে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা করা চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়ায়। টুঙ্গিপাড়াতে বেড়ে যায় পর্যটকের চাপ। বিভিন্ন সময়ে হাইওয়ে পুলিশ ও ট্যুরিস্ট পুলিশের সাথে নিয়ে গোপালগঞ্জ জেলা পুলিশ তাঁর নেতৃত্বে সামগ্রিক ভাবে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কাজ করেছে।

 

পুলিশ সুপার আয়েশা সিদ্দিকা, বিপিএম পিপিএম পুলিশ সুপার হিসেবে তাঁর আড়াই বছর দীর্ঘ সময়ে বিভিন্ন রকম পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে অত্যন্ত সুনাম ও দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করে জেলার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত রেখেছেন। এর পুরস্কার স্বরূপ এ সময়ের মধ্যে তিনি পুলিশের সর্বোচ্চ পদক বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল (বিপিএম) এ ভূষিত হয়েছেন। এছাড়া তিনি ‘পুলিশ ফোর্স এক্সেমপ্লারি গুড সার্ভিস ব্যাজ’ তথা আইজিপি পদকেও ভূষিত হন। তিনি  গোপালগঞ্জে কর্মকালীন সময়ে মোট ১৫ বার গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহামান্য রাষ্ট্রপতি এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু এঁর সমাধি সৌধ এলাকায় সফর করেছেন। এ ভিআইপি ব্যক্তিবর্গের সফর বা জনসভার সময় অত্যন্ত কর্মনিষ্ঠা, দক্ষতা, ও পরিশ্রমের মাধ্যমে জনশৃঙ্খলা রক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সুনাম কুড়িয়েছেন। তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিজ জেলায় কর্মকালীন সময়ে একজন নারী পুলিশ অফিসার হিসেবে সর্বদা নারী নেতৃত্বকে প্রমান করেছেন। একইসাথে অত্র এলাকা তথা দেশ মাতৃকার জন্যে তার একাগ্রভাবে কাজ করার ফলস্বরূপ বাংলাদেশ পুলিশ, সরকার এবং রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি উজ্জল হয়েছে। বিদায়ের প্রাক্কালে আমরা পুলিশ সুপার, গোপালগঞ্জ, আয়েশা সিদ্দিকা-বিপিএম পিপিএম মহোদয়কে আন্তরিক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানাই; একইসাথে কর্ম ও ব্যক্তিগত জীবনে তাঁর উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করছি দয়াময় আল্লাহর কাছে।

 

শেয়ার করুন

আরো দেখুন......