বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৪ অপরাহ্ন
মোশাররফ হোসেন মুসা,তাঁর নাম আনু বিএসসি। তিনি একটি হাইস্কুলের বিজ্ঞানের শিক্ষক। তার আধ্যাত্মিক কথাবার্তার কারণে সকলের কাছে তিনি পাগলা বিএসসি নামে পরিচিত। যেমন-তিনি মৃত্যুর স্বাদ বলতে অভিজ্ঞতা লাভ বুঝেন। এই অভিজ্ঞতার কারণেই জীবেরা মৃত্যুর পর আরেক স্তরে যাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে। তাঁর এই কথায় আস্তিক-নাস্তিক উভয় পক্ষই খুশি হন। কারণ আস্তিকেরা তার এই কথার অর্থ বোঝেন- পুর্নজন্ম কিংবা পুনরুথ্বান। নাস্তিকেরা মনে করেন- জীবেরা মৃত্যুর পর আরেক বস্তুতে রুপান্তরিত হয়। তো সেদিন সকালে জেলা শহর মুখী একটি বাসে বসে আছি। সকালকার এই বাসটিতে চাকুরিজীবি ও শিক্ষার্থীদের সংখ্যাই বেশি থাকে। হঠাৎ আনু বিএসসি বাসটিতে উঠে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য বক্তৃতা দেওয়া শুরু করেন- “প্রিয় যাত্রী ভায়েরা ! আমাকে কেউ ভিক্ষুক, হকার কিংবা মসজিদের চাঁদা আদায়কারী মনে করবেন না। আমি আপনাদের কয়েকটি প্রশ্ন করবো। আমার বিশ্বাস- আপনারা কেউই বিরক্ত হবেন না; বরং আনন্দ লাভ করবেন” ।
তিনি বক্তৃতা থামিয়ে সাইড ব্যাগ থেকে বাংলা, ইংরেজি ও আরবিতে লেখা তিন রকমের লিফলেটের মতো কাগজ বের করেন। তারপর তিনি কাগজগুলো যাত্রীদের কাছে পৌছেঁ দেন। এবার তিনি বলেন- “আপনাদের কাছে তিনটি ভাষার লিফলেট পৌঁছে দিয়েছি। আপনারা ইতোমধ্যে কাগজগুলো পড়া শুরু করেছেন। একটি কাগজে আছে বাংলায় লেখা জাতীয় সংগীত, আরেকটিতে আছে ইংরেজিতে লেখা আব্রাহাম লিংকনের ভাষণ। শেষের কাগজটি আরবিতে লেখা। আমি মনে করি- আপনারা সকলেই বাংলা ও ইংরেজি লেখা কাগজগুলি কম-বেশি পড়েছেন, কেউ কেউ পুরোটাই বুঝতে পেরেছেন। কিন্তু আরবিতে লেখা কাগজটি আপনারা স্পর্শ করতে ভয় পেয়েছেন। মনে করেছেন ওটা সুরা অথবা হাদিসের বর্ণনা। আসলে ওটা আরব্যোপন্যাসের অংশ। আরবীতে লেখা কাগজটি কেউ বুঝে থাকলে হাত তোলেন”।
হাত তুলে কাউকে সম্মতি জানাতে না দেখে তিনি বলেন- ‘আপনারা বাচ্চাদের পড়তে বলেন বুঝার জন্য। বুঝা যায়না এমন কিছু নিশ্চয়ই পড়তে দেন না। কিন্তু আরবির বেলায় সেই নিয়ম মানেন না। অন্য ধর্মের লোকেরা কি আমাদের মতো অর্থ না বুঝে শুধু মুখস্ত করার জন্যই তাদের ধর্ম গ্রন্থ পড়েন ?”
কিছুক্ষন দম নিয়ে আবার বলা শুরু করেণ-‘আমার সর্বশেষ প্রশ্ন, পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি পঠিত গ্রন্থ কোনটি? উত্তরে আপনারা নিশ্চয় নিজ নিজ ধর্মগ্রন্থের কথা বলবেন। কিন্তু আমি মনে করি,পৃথিবীতে সকল ধর্মের লোকেরা যে বইটি বেশি পাঠ করে তার নাম হলো গণিত। গণিত হলো বিজ্ঞানের জননী। যে গণিত ভালো বোঝে, সে সকল কিছুই ভালো বোঝে। বিশ্ব জগতের সকল কিছুই গণিতের নিয়ম মেনে চলে । আমরাও গণিতের মতো সারাদিন হিসেব করে চলি। কিন্তু পড়ার সময় গণিতকে বিশ্বাস করি না। যে জাতি গণিত বিশ্বাস করে না, সে জাতির লোকেরা নতুন কিছু আবিষ্কার করতে পারে না।”
এই বলে তিনি বাস থেকে নেমে যান। তিনি নেমে যাওয়ার পর জনৈক যাত্রী বলেন- মাষ্টারের মাথায় আগের চেয়ে বেশি গন্ডগোল দেখা দিয়েছে। কিন্তু পাশে বসা জনৈক শিক্ষার্থী দ্বিমত পোষণ করে বলেন- ‘আমি তো মনে করি মাষ্টারের মাথা ঠিকই আছে, আমাদের মাথাতেই গন্ডগোল রয়েছে’।
লেখক : গণতন্ত্রায়ন ও গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকার বিষয়ক গবেষক।