পারভেজ রানা, স্টাফ রিপোর্টার
বরগুনায় বেড়েই চলেছে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। পাশাপাশি বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। হঠাৎ করে ব্যাপক হারে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত বৃদ্ধির প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে সরেজমিনে পরিদর্শনের কাজ শুরু করেছে আইইডিসিআরের ৬ সদস্য বিশিষ্ট একটি প্রতিনিধি দল।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) দিনব্যাপী বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি এবং আক্রান্ত রোগীদের বিভিন্ন এলাকায় পরিদর্শন করে তথ্য সংগ্রহ করেন তারা। এর আগে ১৫ জুন আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ তাহমিনা শিরীন পিএইচডি স্বাক্ষরিত একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ৬ সদস্যের টিম গঠন করে বরগুনায় আসার নির্দেশ দেয়া হয়।
বরগুনায় অনুসন্ধানে আসা আইইডিসিআরের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা হলেন- আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডাঃ রত্না দাস, এফইটিপিবি ফেলো (এ্যাডভান্সড-১০ম কোহোর্ট) ডাঃ মোঃ তারিকুল ইসলাম লিমন, এফইটিপিবি ফেলো (এ্যাডভান্সড-১১তম কোহোর্ট) ডাঃ মোস্তফা নাহিয়ান হাবিব, কীটতত্ত্ববিদ মোঃ মোজাম্মেল হক, সিনিয়র মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট মোঃ আজিজুর রহমান এবং স্বাস্থ্য সহকারী মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘন্টায় শুধু বরগুনা হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৭৪ জন। জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১০ জন। বর্তমানে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন ২১৫ জন রোগী। এবছর এখন পর্যন্ত বরগুনার বিভিন্ন হাসপাতালে ১ হাজার ৯৮৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে ৫ জনের। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে এ জেলার আরও ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
গত বছরের তুলনায় ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে বরগুনায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। যা বর্তমানে সরাদেশের মোট আক্রান্তের এক চতুর্থাংশেরও বেশি। জেলায় এমন অস্বাভাবিকভাবে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধানেই বরগুনায় কাজ শুরু করেছে আইইডিসিআরের ৬ সদস্যবিশিষ্টের একটি প্রতিনিধি দল।
হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহের সময় অনুসন্ধানকারী প্রতিনিধি দলের দলনেতা এফইটিপিবি ফেলো (এ্যাডভান্সড-১০ম কোহোর্ট) ডাঃ মোঃ তারিকুল ইসলাম লিমন বলেন, আমরা মনে করি অপরিষ্কার পানিতে ডেঙ্গু বেশি হয়। তবে তা নায় পরিষ্কার জমা পানিতে অর্থাৎ বৃষ্টির সময়ে ডাবের খোসা, টায়ার, ফুলের টবসহ বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে যায়। এ সমস্ত জায়গায় ডেঙ্গুর বিস্তার লাভ করে। আমাদের সকলকে সচেতন থাকতে হবে যাতে এই সমস্ত জায়গায় পানি জমে না থাকে। আশা করি সবাই সচেতন হলে ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে আমরা রক্ষা পেতে পারবো।
আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডাঃ রত্না দাস বলেন, বর্ষার সময় বিভিন্ন জায়গায় জমা পানিতে এডিস মশার বংশবিস্তার হয়। অন্য জায়গার তুলনায় বরগুনায় কি কারণে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি এবং কোথায় জমা পানি কি অবস্থায় রয়েছে তা অনুসন্ধান এবং বিশ্লেষণ করার জন্যই এসেছি। এর পাশাপাশি আমরা একটি সার্ভের কাজও করবো। এছাড়াও জেলা প্রশাসন, সিভিলসার্জন, সাংবাদিকসহ অনেকের সঙ্গেই আমরা বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছি। বরগুনায় কি কারণে এত বেশি ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে তার অনুসন্ধানী কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গুর প্রকোপ কমাতে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। আশা করি সকলের প্রচেষ্টায় আমরা এ ডেঙ্গুর প্রকোপ কমিয়ে আনতে পারবো। অনুসন্ধান শেষে প্রতিবেদন জমা দিতে ৭-৮ দিন সময় লাগবে বলেও জানান তিনি।