বুধবার, ০৪ জুন ২০২৫, ০৮:৩২ অপরাহ্ন
ফকির মিরাজ আলী শেখ, বিশেষ প্রতিনিধি:
ইসলামী দলগুলো একসঙ্গে নির্বাচনে অংশগ্রহণের আশা প্রকাশ করে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে স্থানীয় নির্বাচন ও পরে জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান।
গোপালগঞ্জে জামায়াতে ইসলামীর ইউনিট দায়িত্বশীল সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যকালে দলের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান।
শনিবার (৩১ মে) দুপুরে গোপালগঞ্জে জামায়াতে ইসলামীর ইউনিট দায়িত্বশীল সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ দাবি জানান।
তিনি আরও বলেন, হাজার হাজার মানুষের রক্তের বিনিময়ে নতুন বাংলাদেশকে ঢেলে সাজানোর জন্য প্রধান উপদেষ্টা জুন মাসে নির্বাচনের যে ঘোষণা দিয়েছেন তার এক-দুই মাস এদিকওদিক হওয়া কোনো বড় ব্যাপার নয়। ব্যাপার হলো সুষ্ঠু নির্বাচন। আওয়ামী লীগ আমলের মতই যদি নির্বাচন হয় তাহলে বাংলাদের মানুষ কেনো রক্ত দিয়েছে! একজনের পরিবর্তে আরেকজনকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য মানুষ জীবন দেয় নেই। মানুষ গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য জীবন দিয়েছে। এ জন্য আমরা বলেছি, প্রয়োজনীয় সংস্কার করে রোজার আগে অথবা পরে নির্বাচন দেয়ার জন্য।
প্রতিবেশী দেশ ভারতকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনারা বিবৃতি দিয়েছেন, সবাইকে নিয়ে ডিসেম্বরের ভিতরে নির্বাচনের। এ দেশে কখন নির্বাচন হবে এটা আপনাদের কোনো বিষয় নয়, কেন আপনারা কথা বলেন। আপনারা এ দেশের ওপর ছড়ি ঘুরিয়ে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করেছেন বারবার। বাংলাদেশর মানুষ কোনো ষড়যন্ত্র এবং কোনো দেশের প্রভুত্ব মেনে নেবে না।
তিনি আরও বলেন, ফ্যাসিবাদী সরকার বিগত ১৬ বছরে সবচেয়ে বেশি জুলম নির্যাতনের শিকার হয়েছে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্র শিবিরের নেতাকর্মীরা। হাজার হাজার নেতাকর্মীকে ক্রসফায়ারে নামে হত্যা করা হয়েছে। আয়নাঘরে নিয়ে গুম করে খুন করা হয়েছে। তারা চেয়েছিল এ দেশ থেকে ইসলামকে নির্মূল করা।’
রফিকুল ইসলাম বলেন, জুলাই বিপ্লবে ছাত্র-জনতা, কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষ, বাংলাদেশের সকল শ্রেণিপেশার মানুষ, দল, মত, জাতি, ধর্ম-নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের মুখে ফ্যাসিবাদী সরকারের নাইকা শেখ হাসিনা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদ মুক্ত হয়েছে। দেশের মানুষ দ্বিতীয়বার স্বাধীনতা লাভ করেছে, নতুন বাংলাদেশ পেয়েছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে তিনি দাবি করেন, অবিলম্বে শেখ হাসিনা সরকারের চালানো গণহত্যার বিচার করতে হবে। সরকারের ভেতরে ও বাইরে ফ্যাসিবাদের দোসর এখনও যারা আছে, যারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রে নিয়োজিত এই ফ্যাসিবাদের দোসরদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। এই ফ্যাসিবাদের দোসরদের অনেকেই আর একটি দলের ঘাড়ে ভর করে এই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। এটা প্রশাসন ও সরকার জানে। তাদের চিহ্নিত ও গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাই।
নির্বাচন ও বিচার দাবিতে হুঁশিয়ারি জানিয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চালানো গণহত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ীদের অবিলম্বে বিচার করতে হবে। জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদনে শেখ হাসিনা ও প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততার কথা বলা হয়েছে। সেই অনুযায়ী বিচার প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, মিথ্যা মামলায় জামায়াত নেতাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডে যারা জড়িত—বিচারপতি, প্রসিকিউটর ও মিথ্যা সাক্ষীদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে হিন্দু প্রার্থী দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, জামায়াত জনগণের দল। হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সৎ ও যোগ্য হলে যে কেউই প্রার্থী হতে পারেন। তবে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত কেউ জামায়াতের প্রার্থী হতে পারবেন না।
জামায়াতে ইসলামী গোপালগঞ্জ জেলা শাখার আমির অধ্যাপক রেজাউল করিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ফরিদপুর জেলা আমির মাও. বদরুদ্দীন, সাবেক গোপালগঞ্জ জেলা আমির অ্যাড. আজমল হোসেন সরদার।
অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাবেক জেলা আমির অধ্যক্ষ মাও. আব্দুল হামীদ, জেলা নায়েবে আমির, অধ্যাপক আ. ওয়াহাব মোল্যা, পৌর আমির মাও. ইনামুল হক খান, প্রচার সম্পাদক কাজী ইজাহারুল ইসলাম, ফরিদপুরের পৌর আমির এহসানুল মাহাবুব রুবেল, মুকসুদপুর উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির প্রফেসর ইমরান সরদার, মুকসুদপুর পৌর সেক্রেটারি আবু তালেব ও
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের এডভোকেট সুলাইমান সিদ্দীক(বাদল)প্রমুখ।
জামায়াতে ইসলামী গোপালগঞ্জ জেলা শাখার আয়োজনে অনুষ্ঠিত এ ইউনিট দায়িত্বশীল সম্মেলনে জেলার ৪৫৩টি ইউনিটের সভাপতি ও সেক্রেটারি যোগ দেন।