শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫, ০৬:৫৫ অপরাহ্ন
শরিফা বেগম শিউলী,স্টাফ রিপোর্টার
————————————————————-
রংপুরে পায়রাবন্দ বেগম রোকেয়া স্মৃতি গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ মাহেদুল আলম
নীতিমালা লঙ্ঘনের অভিযোগে চলমান মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার কেন্দ্রসচিব পদ থেকে রংপুরের পায়রাবন্দ বেগম রোকেয়া স্মৃতি গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মাহেদুল আলমকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। আজ বুধবার সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেন রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিকাশ চন্দ্র বর্মণ।
এর আগে সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিককে হাঁটু ভেঙে পঙ্গু করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে সমালোচনায় আসেন অধ্যক্ষ মাহেদুল আলম।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষা-২০২৫ এর পরিচালনা সংক্রান্ত নীতিমালা অনুযায়ী কোন শিক্ষক অথবা কোন কর্মকর্তার ছেলে/মেয়ে/পোষ্য সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডের কোন কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলে তিনি কেন্দ্রসচিব হতে পারবেন না।
এদিকে কেন্দ্রসচিব অধ্যক্ষ মাহেদুল আলমের মেয়ে এবার রংপুর ক্যান্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে চলমান এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে। সেই তথ্য গোপন করে এসএসসি পরীক্ষা পরিচালনা সংক্রান্ত নীতিমালা লঙ্ঘন করে চলতি এসএসসি পরীক্ষায় কেন্দ্রসচিবের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন অধ্যক্ষ মাহেদুল আলম। বিষয়টির সত্যটা পাওয়ায় কেন্দ্রসচিব পদ হতে মাহেদুল আলমকে তাৎক্ষণিক অব্যাহতি প্রদান করা হয়।
এ বিষয়ে মিঠাপুকুর উপজেলার শঠিবাড়ী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হরেন্দ্রনাথ সাহা বলেন, আমার মেয়ে মিঠাপুকুর কেন্দ্র থেকে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ায় আমি কেন্দ্রসচিবের দায়িত্ব পালন করিনি।’
এর আগে শুকুরেরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম ও রাণীপুকুর উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল্লাহেল কাফির সন্তান এসএসসি পরীক্ষার্থী হওয়ায় তারা কেন্দ্রসচিবের দায়িত্ব পালন করেনি।’
কেউ যদি তথ্য গোপন করে কেন্দ্রসচিবের দায়িত্ব পালন করে, তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতিসহ পরীক্ষা পরিচালনা বিধিমালা লঙ্ঘনের দায়ে পরীক্ষা আইনে কঠিন শান্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান তারা।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বোর্ড দিনাজপুরের উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোঃ কামরুজ্জামান পাইকাড় জানান, সংশ্লিষ্ট বোর্ডের আওতাধীন কোন কেন্দ্রে সন্তান পরীক্ষার্থী থাকলে সেই ব্যক্তির ওই বোর্ডের আওতাধীন কোথাও কেন্দ্রসচিব হওয়ার কোন সুযোগ নেই। শুধু কেন্দ্রসচিব পদ থেকে অব্যাহতি নয় একই সঙ্গে পরীক্ষা পরিচালনা বিধিমালা লঙ্ঘনের দায়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার ইউএনও/ডিসি অভিযুক্ত কেন্দ্রসচিবের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।
মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিকাশ চন্দ্র বর্মণ জানান, পরীক্ষা নীতিমালা লঙ্ঘনের দায়ে কেন্দ্রসচিবকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। একই সঙ্গে ওই প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র শিক্ষক রাজ্জাকুর রহমানকে কেন্দ্রসচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় বিধি মোতাবেক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এর আগে গত ২১ এপ্রিল বিকেলে ‘চুক্তিতে নকল সরবরাহের প্রতিযোগিতা এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রে’ শিরোনামে দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রচারিত হয়। সংবাদ প্রকাশের পরেই ওইদিন সন্ধ্যায় কেন্দ্রসচিব অধ্যক্ষ মাহেদুল আলম মুঠোফোনে সাংবাদিক খন্দকার রাকিবুল ইসলামকে হাঁটু ভেঙে পঙ্গু করে দেওয়ার হুমকিসহ গালিগালাজ করেন। এছাড়াও ওই রিপোর্টের জন্য সাংবাদিকদের নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দেয়ার হুমকি দেন মাহেদুল আলম। এ ঘটনায় হুমকির কল রেকর্ড বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে তীব্র সমালোচনা সৃষ্টি হয়। গণমাধ্যমকর্মী এবং সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ অভিযুক্ত অধ্যক্ষকে অপসারণের দাবি জানান।
এদিকে ‘এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রে চুক্তিতে নকল সরবরাহ’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর গতকাল নকল সরবরাহের দায়ে অভিযুক্ত অধ্যক্ষ মাহেদুল আলমকে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করেছে মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিকাশ চন্দ্র বর্মণ।