এনামুল কবীর এনাম, বদলগাছী, নওগাঁ থেকে:-

নওগাঁর বদলগাছীতে নিয়োগ কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে তিনটি পদে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে দাউদপুর ইসলামীয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা সেকেন্দার আলীর বিরুদ্ধে।জানাগেছে পার্শ্ববর্তী প্রতিষ্ঠান প্রধানের, উপজেলা ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে নিরাপত্তা কর্মী, আয়া ও সহকারী গ্রন্থাগারিক কাম ক্যাটালগার নিয়োগ দেখান মাদ্রাসা সুপার । বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তৎকালীন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এটিএম জিল্লুর রহমান।

তথ্যঅনুসন্ধানে যানা যায়, গত ২০২০ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নিরাপত্তা কর্মী, আয়া, সহকারী গ্রন্থাগারিক কাম ক্যাটালগার সহ অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। তারমধ্যে উপরের তিনটি পদ শুন্য হলেও অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে আসাদুজ্জামান নামের একজন উক্ত পদটিতে বহাল আছেন। ঐ বছরের ১৮ মার্চ তারিখ দেখিয়ে নিয়োগের কাগজপত্র তৈরি করা হয়েছে। উক্ত কাগজে দেখা যায় পার্শ্ববর্তী গয়ড়া তেতুলিয়া ডিগ্রী ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. আব্দুর রশিদ দীর্ঘ ৪ বছর পর কবর থেকে উঠে এসে উক্ত নিয়োগ বোর্ডের সদস্য হিসাবে স্বাক্ষর করেছেন। কিন্তু মাওলানা আব্দুর রশিদ গত ২০১৫ সালের ৯ ফেব্রুয়ারী দুনিয়ার শেষ ঠিকানায় চলে যান,তাকে দাপন করা হয়েছে ফরিদপুর জেলায় তার গ্রামের বাড়িতে। এবং ঐ সালের মে মাসের ৫ তারিখে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন আ.ন.ম. মাওলানা লুৎফর রহমান।
মাওলানা লুৎফর রহমান আরও বলেন মরার ৪ বছর পর স্বাক্ষর কাল্পনিক।
মাদ্রাসার রেজুলেশন ও নিয়োগ বোর্ডের ফলাফল সীটে আবদুল রশিদ ছাড়াও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এটিএম জিল্লুর রহমান ও ডিজির প্রতিনিধি হিসাবে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. মোবারুল ইসলামের স্বাক্ষর রয়েছে। সেই নিয়োগ বোর্ডের বিষয়ে উক্ত কর্মকর্তাগণ কিছুই জানেন না বা কোন কাগজ পত্রে স্বাক্ষর করেননি। নিয়োগের কাগজপত্রে দেখা যায়, নিরাপত্তা কর্মী পদে উপজেলার দাউদপুর গ্রামের আব্দুস সামাদের ছেলে মো. ইসাহাক আলী, আয়া পদে দাউদপুর গ্রামের শহিদুল ইসলাম মাস্টারের মেয়ে মোছা. শারমিন সুলতানা ও সহকারী গ্রন্থাগারিক কাম ক্যাটালগার পদে নিয়োগ পেয়েছেন মাধবপাড়া গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে আবু মুস্তাকিম। গত ১৯/৩/২০২০ ইংরেজি তারিখে নিয়োগ পএ প্রদান করেন মাদ্রাসার সুপার সেকেন্দার আলী। উক্ত নিয়োগ পএ মোতাবেক গত ২৫ /০৩/২০ ইংরেজি তারিখে যোগদান করেন বলে কাগজ সুএে জানা যায়। নিয়োগ প্রাপ্ত ও যোগদান পএ দাখিল করে ও কোন দিন মাদ্রাসায় যাননি তারা, এবং হাজিরা খাতায় স্বাক্ষরও করে না বলে একাধিক সুএে জানা গেছে । কিন্তু আয়া শারমিন সুলতানার বেতনের জন্য অনলাইনে আবেদন করেছেন মাদ্রাসার সুপার।

এবিষয়ে তৎকালীন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এটিএম জিল্লুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ঐ উপজেলায় থাকতে এই পদগুলোতে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। পরবর্তীতে গতবছর আমার কাছে এসেছিলো ব্যাকডেটে স্বাক্ষর নেওয়ার জন্য। আমি তাদের ফিরিয়ে দিয়েছি এর বেশি কিছু জানিনা।
সহকারী গ্রন্থাগারিক কাম ক্যাটালগার পদে নিয়োগ আবু মুস্তাকিমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন , আমি কোন নিয়োগ বোর্ডে বসিনি। আমার কাছে টাকা আর কাগজপত্র চেয়েছিলো সেগুলো আমি দিয়েছিলাম। আমি শুধু যোগদান পত্রে স্বাক্ষর করেছি। সেই যোগদানপত্রে সুপার আমাকে দিয়েছিলেন ।

মাদ্রাসার তৎকালীন সভাপতি, আয়া পদে নিয়োগপ্রাপ্ত শারমিন সুলতানার বাবা পার্শ্ববর্তী উপজেলা পত্নীতলার বামনকুড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত). শহিদুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানিনা। আমরা ডিজির প্রতিনিধি নিয়ে এসেছিলাম। পরবর্তীতে সেই সময় নিয়োগ বোর্ড বন্ধ হয়ে যায়। তিনি আরও বলেন আমার স্বাক্ষর কে বা কারা জাল করেছে তা আমি জানিনা।

মাদ্রাসার সুপার মো. সেকেন্দার আলী মোবাইল ফোনে বলেন, আমার স্বাক্ষর জালিয়াতি করা হয়েছে বিষয়টি আমি জানিনা, তবে এবিষয়ে আমি থানায় জিডি করেছি।

বর্তমান উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এবিষয়ে আমাকে কেউ অভিযোগ দিলে এবং আমার উর্ধতন কর্মকর্তা আমাকে নির্দেশ দিলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করিব।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. লুৎফর রহমান বলেন, বিষয়টি আমি জানিনা খতিয়ে দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।বিষয় টি চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
এনামুল কবীর এনাম বদলগাছী নওগাঁ।