রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:১৪ পূর্বাহ্ন
ফকির মিরাজ আলী শেখ,বিশেষ প্রতিনিধি:
গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার গোহালা ইউনিয়নের মনিরকান্দি গ্রামের শাজাহান শেখের ছেলে মিরাজুল শেখ (২৪) দালালের খপ্পরে পড়ে লিবিয়ায় গিয়ে প্রায় ৩ মাস ধরে নিখোঁজ রয়েছেন। শুধু মিরাজুল শেখ নয় একাধিক পরিবারের সন্তানকে ইতালি পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে লিবিয়াতে আটকে রেখে কোটি টাকার ওপরে হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ গোহালা গ্রামের আবুল কালাম আজাদ ও মোল্লাদি গ্রামের গিয়াস উদ্দিন মোল্লার ছেলে রুহুল আমিন মোল্লা’সহ তার সিন্ধিকেটের বিরুদ্ধে।
এঘটনায় আবুল কালাম আজাদ ও রুহুল আমিন মোল্লার বিরুদ্ধে মানব পাচার দমন আইনে গোপালগঞ্জ আদালতে মামলা করে নিখোঁজ মিরাজুল শেখের বাবা শাজাহান শেখ। এর আগে মুকসুদপুর উপজেলার সিন্ধিয়াঘাট পুলিশ ফাঁড়িতে অভিযোগ করলে আবুল কালাম আজাদের সহযোগী রুহুল আমিন মোল্লাকে ফাঁড়িতে ডেকে নাম মাত্র সালিস করে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর রেখে তাকে ছেড়ে দেয় ফাঁড়ির আইসি শওকত হোসেন।
নিখোঁজ মিরাজুল শেখের মা রেবেকা বেগম বলেন, আমার ছেলে মিরাজুলকে ইতালি নেওয়ার কথা বলে আবুল কালাম আজাদ ও রুহুল আমিন মোল্লা ১২ লক্ষ টাকা নেয়। পরে মাফিয়াদের দিয়ে ধরিয়ে আরও ৭ লক্ষ টাকা ডাচ বাংলা ব্যাংকের মাধ্যমে নেয়। মাফিয়াদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়ার পর আমার ছেলে তিন মাস ধরে নিখোঁজ রয়েছে। আমার ছেলে বেঁচে আছে নাকি মারা গেছে সে খবরও আমরা পাচ্ছিনা। আমি আমার ছেলেকে জীবিত ফেরৎ পেতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
মিরাজুলের বোন খাদিজা আক্তার বলেন, আমার ভাইকে লিবিয়া নিয়ে মাফিয়াদের কাছে তুলে দিয়ে তাকে মারপিট করে আমাদের কাছে সেই নির্যাতনের ভিডিও পাঠিয়ে টাকা দাবি করে। ভাইকে বাঁচানোর জন্য টাকা দেওয়ার পরে এখনও তিন মাস ধরে আমার ভাই নিখোঁজ রয়েছে। আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্ট সকলের নিকট আমার ভাইকে ফেরৎ চাই ও দালালদের কঠিন বিচার দাবী করছি।
এদিকে সরেজমিনে অভিযুক্ত আবুল কালাম আজাদের বাড়িতে গেলে, উক্ত মামলায় তিনি জেল হাজতে রয়েছেন মর্মে তার পরিবার কোন বক্তব্য দিতে রাজি হননি। অপরদিকে অভিযুক্ত রুহুল আমিন মোল্লার পৈতৃক বাড়িতে গিয়ে তালাবদ্ধ দেখা যায় এবং টেকেরহাট গোপালগঞ্জ মহাসড়ক সংলগ্ন জলিড়পাড়ের আলিশান বাড়িতে গিয়ে খুঁজে না পেয়ে মুঠো ফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে বর্তমানে ঢাকায় রয়েছি। ভুক্তভোগীর পরিবার ও এলাকাবাসী সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
এবিষয়ে গোহালা ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মাতুব্বর গভীর দুঃখ প্রকাশ করে গণমাধ্যমকে বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি, উন্নত জীবনের মিথ্যা প্রলোভনে মানুষকে মধ্যপ্রাচ্যে পাঠানোর নামে জিম্মি করে যারা মোটা অংকের মুক্তিপণ আদায় করে সর্বস্বান্ত করছে তাদেরকে দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
মুকসুদপুর থানার ওসি (তদন্ত) শীতল চন্দ্র পাল বলেন, এ ঘটনায় আদালতের নির্দেশে মুকসুদপুর থানায় মানব পাচার দমন আইনে একটি মামলা রুজু হয়েছে এবং আবুল কালাম আজাদকে গ্রেপ্তার করে আদালতে মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। আবুল কালাম আজাদ ঘটনার সাথে জড়িত থাকা ও টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেছে। অপর আসামি রুহুল আমিন মোল্লাকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে। ভিকটিম মিরাজুল শেখ এখন পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছে।