মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:৪৫ অপরাহ্ন
আব্দুল মান্নান বিশেষ প্রতিনিধিঃ
১৪ অক্টোবর, ২০২৩ নদীমাতৃক বাংলাদেশে লোকায়ত বাংলার লোকসংস্কৃতির একটি অংশ ছিল নৌকাবাইচ। হাজার বছরের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সংস্করণে নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয় রাজশাহীর বাঘা উপজেলার গড়গড়ি ইউনিয়নের বেঙগাড়ি এলাকায়। সরব আনাগোনায় আনন্দে ভাসছিল গ্রামটিসহ আশে পাশের এলাকা ।
দাঁড় টানার কসরত ও নৌকা চালনার কৌশল দ্বারা বিজয় লাভের লক্ষ্যে একাধিক দলের মাঝি তার দল নিয়ে আমোদ- প্রমোদমূলক প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় ।
‘নাও ছাড়িয়া দে, পাল উড়াইয়া দে’, ‘জোরসে মাঝি হেইয়ো’- গানের সুর তালে, মাঝি- মাল্লার বর্ণিল সাজে পদ্মা নদীতে ভাসবে নানান রঙের নৌকা । করতাল, খোল, কাশি, বাঁশি ও ঢোঁল সহ নানান বাদ্য যন্ত্র নিয়ে বিশেষ ভঙ্গিতে গান গেয়ে লোকজ সংস্কৃতিকে জাগিয়ে তুলন প্রতিযোগীরা। বিজয়ী হতে এগিয়ে যাবার লড়াইয়ে শ্রষ্টাকে স্মরন করে মাল্লারা বৈঠা নিয়ে তালে তালে গান গেয়ে এগিয়ে নিয়ে যান নৌকাকে। করতালি, হর্ষধ্বনি, নৌকা বাইচের লোকজ গান, বাদ্য-বাজনায় মুখরিত হয়ে উঠে নদী পাড় এলাকা।
দর্শক ও সমর্থকরাও উৎসাহ দিতে নানা ধরনের নৌকা সাজিয়ে মাইক বেঁধে অবস্থান নেন নদীর তীরে। সংশিষ্ট এলাকার বাড়িতে বাড়িতে ছিল আত্মীয় স্বজনদের ভিড়। বিকিকিনি করার জন্য ছোট বড় মিলে প্রায় ৫০০ শত দোকানী তাদের পসরা সাজিয়ে বসে নৌকা বাইচের মেলায়। শ্রেণী পেশার হাজার হাজার নারী পুরুষের সমাগমে মহা মিলনে পরিণত হয় নৌকা বাইচের এ মেলা। মৃত প্রায় মৃৎ শিল্পের এক অপরুপ সমারোহ ঘটেছিল বাঘার বেংগাড়ী নৌকা বাইচ মেলায়। যেমনটি হয়েছিল গত বছরের ২১ অক্টোবর।
পার্শ্ববর্তী সরেরহাট গ্রামের ৫৫ বছর বয়সী জাহিদ সরকার জানান,নৌকা বাইচ দেখতে গত বুধবার তার বাড়িতে এসেছেন মেয়ে-জামাইসহ নিকট আত্মীয়রা। তিনি বলেন, জন্মের পর থেকে নৌকা বাইচের আয়োজন দেখছেন। এসময়টা এলাকার প্রায় বাড়িতে আসেন দুরের আত্মীয় স্বজন। বছরের এই সময়টাই দেখা হয় অনেক মানুষের সাথে। এতে সব বয়সের মানুষেরাও আনন্দ পান। আয়োজক কমিটির সভাপতি গড়গড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম জানান, ৩দিন ব্যাপি নৌকা বাইচ মেলার কার্যক্রম শুরু হয় বৃহসপতিবার(১২ অক্টোবর) বিকেল ৩টা থেকে। সন্ধার পর ছিল সাংস্কৃতি অনুষ্ঠান।
রবিউল ইসলাম বলেন, এলাকাবাসী নৌকা বাইচকে পূর্ব ঐতিহ্য মনে করেন। প্রায় শত বছর ধরে এখানে নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এর ধারাবাহিকতায় এ বছরও নৌকা বাইচের আয়োজন করা হয়েছে ।
বৃহসপতিবার (১৪-১০-২০২৩) নৌকা বাইচের মেলায় সমাপনী দিনে এর উদ্বোধন অনুষ্ঠান পুরষ্কার বিতরণ করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি। উল্লেখ্য শত বছরের ঐতিহ্যবাহী বেংগাড়ীর নৌকা বাইচের মেলায় প্রধান গেট দিয়ে ঢুকে যাওয়ার সময় প্রতি মধ্যে প্রথমে ফুলের তোড়া ও সম্মাননা স্বারক প্রদান করে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন চাঁদপুর গাউসুল আজম রহমানিয়া মান্নানীয়া দরবার শরীফের পক্ষ থেকে আমজাদীয়া ফুরকানীয়া মাদ্রাসার ছাত্র/ছাত্রী ও পরিচালক মোঃ আব্দুল মান্নান মাইজভান্ডারী। স্পিট বোড নিয়ে নৌকা বাইচ উপভোগ করেন প্রতিমন্ত্রী । পুরুস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী বলেন, নৌকা বাইচের নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতায় লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম দেখে প্রতিমন্ত্রী মুগ্ধ হয়ে বলেন এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে হবে। আমি যতদিন বেচে থাকবো সহয়োগিতা করবো।
বড় নৌকা প্রতিযোগতায় প্রথম হয়েছেন চাঁদপুর গ্রামের শাহ আলম, দ্বিতীয় দুড়দুড়ি গ্রামের হুমায়ুন কিবরিয়া, তৃতীয় হয়েছেন খায়েরহাট বাম্মন ডাঙ্গা গ্রামের মঞ্জুরুল ইসলাম বুদু হাজী। শুক্রবার ছোট হাত বৈঠা নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছেন আশরাফুর গ্রামের শহিদুল ইসলাম, দ্বিতীয় হয়েছে দুড়দুড়ি গ্রামের আরিফুর রহমান। প্রথম পুরুস্কার ছিল ১৬০ সিসি মোটরসাইকেল, দ্বিতীয় পুরুস্কার ১১০ সিসি মোটরসাইকেল এবং তৃতীয় পুরুস্কার ৮ সেফটি ফ্রিজ।
গড়গড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও নৌকা বাইচ মেলা কমিটির সভাপতি, ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম রবির সভাপতিত্বে ও গড়গড়ি ইউনিয়নের সদস্য নাসির উদ্দীন খাজার সঞ্চালনায় পুরুস্কার বিতরন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন,উপজেলা নির্বাহি অফিসার শারমিন আখতার,উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল,রাজশাহী জেলার স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি রোকনুজ্জামান রিন্টু,গড়গড়ি ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ(ভারপ্রাপ্ত) আনিসুর রহমানও সমন্বয়ক রফিকুল ইসলাম প্রমুখ ।