মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:৪৫ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক:-
বাংলাদেশ আমার অহংকার এই স্লোগান নিয়ে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে জোরালো ভূমিকা পালন করে আসছে। র্যাব সৃষ্টিকাল থেকে সমাজের বিভিন্ন অপরাধ এর উৎস উদঘাটন, অপরাধীদের গ্রেফতারসহ আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। র্যাব-৭, চট্টগ্রাম অস্ত্রধারী সস্ত্রাসী, ডাকাত, ধর্ষক, দুর্ধর্ষ চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, খুনি, ছিনতাইকারী, অপহরণকারী ও প্রতারকদের গ্রেফতার এবং বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও মাদক উদ্ধারের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করায় সাধারণ জনগনের মনে আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
ভুক্তভোগী ভিকটিম (১৯) একজন গার্মেন্টসকর্মী এবং চট্টগ্রাম জেলার পাঁচশাইশ এলাকায় তার মা-বাবার সাথে বাড়া বাসায় বসবাস করছিল। ভিকটিক তার কর্মস্থালে আসা-যাওয়াকালীন বখাটে সিদ্দিক @ ডিবি সিদ্দিক ও তার ২/৩ বন্ধুদের সাথে নিয়ে ভিকটিককে বিভিন্ন প্রকার প্রলোভন দেখিয়ে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে উত্ত্যক্ত করে আসছিল। পরবর্তীতে বখাটে সিদ্দিক বিবাহ করবে বলে আশ্বস্ত করে ভিকটিমের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে। এরই ধারাবহিকতায় গত ১৩ অক্টোবর ২০১০ইং তারিখে রাত আনুমানিক ২০০০ ঘটিকায় গার্মেন্টস ছুটির পর ভিকটিম বাসার ফেরার পথে আব্দুর শুক্কুর ও কয়ৈতা বেগম @ শেফালী’র সহযোগীতায় বখাটে সিদ্দিক @ ডিবি সিদ্দিক বিবাহ করার কথা বলে ফুঁসলিয়ে ভিকটিমকে মুহাম্মদপুরস্থ একটি বাসায় নিয়ে যায়। বাসায় সিদ্দিকের পরিবারের কোন সদস্যকে দেখতে না পেয়ে কারণ জিজ্ঞাসা করলে ভিকটিমকে বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি এবং বিবাহের প্রলোভন দেখিয়ে ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোড়পূর্বক ভিকটিমকে ধর্ষণ করে। পরবর্তীতে বিবাহের প্রস্তুতির কথা বলে পতিতাবৃত্তির উদ্দেশ্যে দীর্ঘদিন আটকে রেখে জোড়পূর্বক ভিকটিমকে ধর্ষণ করে।
ভিকটিমের সন্ধান না পেয়ে ভিকটিমের পরিবার বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুজি করতে থাকে। খোঁজাখুজির একপর্যায়ে ভিকটিমের কর্মস্থলের বান্ধবী ও আশপাশের লোকজনের নিকট থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী সিদ্দিক @ ডিবি সিদ্দিক এর বাসায় গিয়ে ভিকটিমকে খোঁজে পায়। ভিকটিমকে উদ্ধারের চেষ্টা করলে আব্দুর শুক্কুর ও কয়ৈতা বেগম @ শেফালী ভিকটিমকে উদ্ধারে বাধা প্রদান করে। পরবর্তীতে পাঁচলাইশ থানা পুলিশের সহায়তায় ভিকটিমকে উদ্ধার করে।
উক্ত ঘটনায় ভিকটিমের মা বাদী হয়ে চট্টগ্রাম জেলার পাঁচলাইশ থানায় ৪ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-২৬, তারিখ ২৬ অক্টোবর ২০১০ইং, ধারা- নারী ও শিশু নির্যাতন ও দমন আইন ২০০০ ৫(১)/৩০ ও ৯(১)/৩০, নারী ও শিশু মামলা নং ৫০৯/১৮ (নতুন), ১০৯/১১ (পুরাতন)। মামলা রুজুর পর হতে বর্ণিত ধর্ষক ও সহযোগীরা আইন শৃংখলা বাহিনীর নিকট হতে গ্রেফতার এড়াতে এলাকা ছেড়ে আত্মগোপন করলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত শেষে আসামীদের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল করেন। পুলিশ প্রতিবেদন এবং সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিজ্ঞ আদালত আসামীদের যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ২ বছরের কারাদন্ড প্রদান করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
র্যাব-৭, চট্টগ্রাম বর্ণিত মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারী অব্যাহত রাখে। নজরদারীর এক পর্যায়ে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম গোপন সূত্রে জানতে পারে যে, বর্ণিত মামলার যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত ওয়ারেন্ট ভুক্ত পলাতক আসামী কয়ৈতা বেগম @ শেফালী চট্টগ্রাম জেলার পাঁচলাইশ মডেল থানা এলাকায় অবস্থান করছে। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-৭, চট্টগ্রামের একটি আভিযানিক দল গত ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ইং তারিখে বর্ণিত স্থানে অভিযান পরিচালনা করে আসামী ১। কয়ৈতা বেগম @ শেফালী (৪৫), স্বামী- আব্দুর শুক্কুর’কে আটক করতে সক্ষম হয়। আটককৃত শেফালী’র দেওয়া তথ্য মতে গত ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ইং তারিখ আনুমানিক ১৪৩০ ঘটিকায় পাঁচলাইশ মডেল থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত ওয়ারেন্ট ভুক্ত পলাতক আসামী ২। আব্দুর শুক্কুর (৫০), পিতা-মৃত ইসলাম ভূইয়া, উভয়ের সাং-মালুরা, থানা-শাহরাস্তি, জেলা-চাঁদপুরদের’কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে আটককৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে তারা বর্ণিত মামলার যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত ও ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড অনাদায়ে ২ বছরের সশ্রম কারাদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি মর্মে স্বীকার করে। জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায় তারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিকট হতে গ্রেফতার এড়াতে দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে ছিল।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।