মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:৪৫ অপরাহ্ন
টি আই, মাহামুদ, বান্দরবান জেলা প্রতিনিধি:-
নারী নিয়ে পুতুল খেলা যেন তার কাছে নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। কারো সাথে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সম্পর্ক, আবার কাউকে বিয়ে করে তালাক দেওয়া তার কাছে স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৩নং পূর্ব পালংপাড়ার বাসিন্দা হাসুমিয়া ও আয়না বেগমের ছেলে, আলীকদম ক্যান্ট পাবলিক স্কুলের দপ্তরী “সাহাব উদ্দিন” বিভিন্ন সময় এলাকায় এবং এলাকার বাহিরে পারিবারিক ভাবে বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়ে পরবর্তীতে ঐ মেয়েদের সাথে প্রেমের সম্পর্ক স্থাপন করে নারীর সতীত্ব লুটে এবং গোপনে ভিডিও ধারণ করে কিছুদিন পর ছেড়ে দেয়া তার স্বভাবে পরিনত হয়েছে।
২০২২ সালে চকরিয়ার কাকারা ইউনিয়নের এক মেয়েকে বিয়ের জন্য পারিবারিক ভাবে প্রস্তাব পাঠায় সাহাব উদ্দিন, বিয়ের আলোচনা চলাকালীন সময়ে ওই মেয়ের মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করে মেয়েটির সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে তাকে নিয়ে কক্সবাজার সহ বিভিন্ন জায়গায় স্বামী-স্ত্রীর পরিচয়ে হোটেলে রাত কাটায় এবং ওই সময়ে মেয়েটির সাথে দৈহিক সম্পর্কের ভিডিও ধারণ করে। কিছুদিন পর মেয়েটিকে চরিত্রহীন অপবাদ দিয়ে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানায় সাহাব উদ্দিন। তৎসময়ে মেয়েটি আলীকদম উপজেলার জনপ্রতিনিধি এবং স্থানীয় গন্যমান্য ব্যাক্তি-সহ আলীকদম সেনা জোনের সহযোগিতা কামনা করলে বিচারের মাধ্যমে জরিমানা দিয়ে বেঁচে যায় সাহাব উদ্দিন।
এরপর আলীকদমে নয়াপাড়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের এক মেয়েকে নিজের পূর্বের কুকীর্তির বিষয় গোপন রেখে কয়েক মাস পূর্ব থেকে বিভিন্ন মাধ্যমের প্রস্তাবনায় ১৬/০৮/২০২৩ ইং তারিখে ৪,৫০,০০০ (চার লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা) দেনমোহর ধার্যের ভিত্তিতে দেড় লক্ষ টাকা নগদ ও তিন লক্ষ টাকা বাকী উল্লেখ করে পারিবারিক ভাবে বিয়ের সম্পন্ন হয়।
বিয়ে পরবর্তী আনুষ্ঠানিক ভাবে মেয়ে উঠিয়ে নিবে আস্বস্ত করে ছেলের পরিবার বিদায় নিলেও কাবিন সম্পাদনের পূর্বে নিয়মিত যাতায়াত, এবং কাবিন পরবর্তী সময়েও পাত্র শাহাব উদ্দিন শশুর বাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত শুরু করে বলে জানান তার কাবিন মূলে স্ত্রী রোজিনা আক্তার।
এই অবস্থায় সাহাব উদ্দিন গত কিছুদিন পূর্বে মেয়ের পরিবারকে জানায়, তাদের মেয়ের অন্য পুরুষের সাথে প্রেমের ও অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক রয়েছে। তাই আমি আপনাদের মেয়েকে নিতে পারবো না এবং নয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদে মেয়ের পরিবারের বিরুদ্ধে বিচার প্রদান করে।
নয়াপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান এম, কফিল উদ্দিন বিচার কাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্যে শাহাব উদ্দিন এবং তার পরিবারকে পরিষদে দুই দুইবার হাজির হওয়ার জন্য ডাকলেও তারা উপস্থিত হয়নি, তৃতীয়বারে উপস্থিত হলে চেয়ারম্যান এম, কফিল উদ্দিন ছেলে পক্ষের বিস্তারিত শুনে সঠিক তদন্তের আলোকে বিচারের আশ্বাস দিলে শাহাব উদ্দিনের পরিবার চলে আসে।
এরই মধ্যে শাহাব উদ্দিন বিভিন্ন সময়ে মেয়ে রোজিনা আক্তারের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করেন। এই সুবাদে রোজিনা আক্তার দুইবার স্বামী শাহাব উদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে উপস্থিত হয়। কিন্তু শাহাব উদ্দিনের পরিবারের সদস্যরা রোজিনাকে গ্রহণ না করে তাকে বিভিন্ন অপবাদে তিরস্কার, মারধর এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে।
বিষয়টি আলীকদম উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাবের মোঃ সোয়াইব এর কানে আসলে তিনি জেলা পরিষদের সদস্য দুংড়ি মং মার্মা, সদর ইউপি চেয়ারম্যান নাছির উদ্দিন বিএ, নয়াপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান এম,কফিল উদ্দিনকে সুরাহার দ্বায়িত্ব দেন।
সাহাব উদ্দিন বিচারকদের উপেক্ষা করে গত ৩০/০৮/২০২৩ইং তারিখে নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে মেয়েটিকে তালাক দিয়ে তালাকের কপি চেয়ারম্যান কফিল উদ্দিন ও মেয়ের পরিবারের কাছে পাঠায়।
তালাকনামা পেয়ে মেয়ের পরিবার গত ৫/০৯/২০২৩ইং তারিখে সাহাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আদালতে মামলা দায়ের করলে সে একরাত জেল খেটে পরদিন জামিনে মুক্ত হয়ে আসে।
এব্যাপারে আলীকদম সদর ইউপি চেয়ারম্যান নাছির উদ্দিন ও নয়াপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান এম, কফিল উদ্দিন বলেন, সাহাব উদ্দিন আমাদের কাছে দেয়া বিচারের সুরাহা না দেখে নিজ সিদ্ধান্তে মেয়েটিকে তালাক দেওয়ায় আমরা উক্ত বিচারকার্য বাতিল করে দিই।
উক্ত ঘটনাবলীর বিষয়ে সাহাব উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে সে নয়াপাড়া ইউনিয়নের মেয়েটির সাথে কাবিনের কথা স্বীকার করে জানায়, মেয়ে দুটি চারিত্রিক দিক দিয়ে ভালো ছিলো না, তাই আমি তাদের তালাক দিতে বাধ্য হয়েছি।
বিশেষ তথ্যে জানা যায়, পরপর দুটি মেয়ের সাথে বিয়ের নাটক সাজিয়ে তাদের চরিত্রে কালিমা লেপন করেও থেমে নেই সাহাবউদ্দিন। একটি মামলা মাথায় নিয়েও উপজেলার চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের চিনারী বাজার এলাকায় আরো এক মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছে এই ব্যাক্তিটি।
সূত্র আরো জানায়, এই দুই নারীর সাথে প্রতারণার পূর্বেও অনেক মেয়ের সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল।