শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:২৬ অপরাহ্ন
ফকির মিরাজ আলী শেখ,বিশেষ প্রতিনিধি,গোপালগঞ্জ থেকে: গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার জলিরপাড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপি নেতা মিহির কান্তি রায় স্টকজনিত কারণে মারা যাওয়ায় তার স্ত্রী শেফালী হালদারকে জলিরপাড় ইউনিয়ন পরিষদের উত্তরাধিকারী ঘোষনা করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য ও অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালক খন্দকার মনজুরুল হক লাভলু।
আর এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় এ নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও সাধারন মানুষসহ মুকসুদপুর উপজেলা এলাকায় চাঞ্চল্য ও আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে গোটা উপজেলায়।
জানাগেছে, রবিবার(১১জুন) বেলা সাড়ে দশটায় সদ্যপ্রয়াত মুকসুদপুর উপজেলার জলিরপাড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা মিহীর কান্তির বাড়িতে এক শোক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এশোক সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য ও অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালক খন্দকার মনজুরুল হক লাভলু।এ সময় মুকসুদপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ কাবির মিয়া, বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সোহেল মোল্যা,ননীক্ষীর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান শেখ সহ স্থানীয়রা উপস্থিত ছিলেন।
ওই ভিডিওতে দেখা যায়,বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য ও অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালক খন্দকার মনজুরুল হক লাভলু বলেন, জলিরপাড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিহির কান্তি রায় আমার অত্যান্ত কাছের মানুষ ছিলেন। তাই তার স্মৃতি ধরে রাখতে তার স্ত্রী জলিরপাড় ইউনিয়ন পরিষদের উত্তরাধিকার। আমি যত দিন বেঁচে আছি এই পরিবারের সমস্ত দায়-দায়িত্ব আমি দেখবো। মিহিরের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করি। পরপারে সে যেন ভালো থাকে।
এছাড়া তিনি তার ফেসবুক ওয়ালে লেখেন, জলিরপাড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিহিরের আকস্মিক ও অকাল মৃত্যুর পর আমি তার পরিবারের দেখা করতে গেলে, আমি নিজেই শোকে কাতর ও আপ্লুত হই। এটা সহ্য করা কঠিন। আল্লাহ পাক মিহিরের পরিবারের সদস্যদের উপর রহমত দান করুন ও মিহিরের আত্মারশান্তি কামনা করি। আমি তার পরিবারের সাথে আছি এবং থাকবো ইনশাআল্লাহ।
এরপর এ ঘোষনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলে মুকসুদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও সাধারন মানুষের মধ্যে তীব্র আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় শুরু হয়।
এ ব্যাপারে ননীক্ষীর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ রনি আহম্মেদ সাংবাদিকদেরকে জানান, ইউনিয়ন পরিষদের কোন চেয়ারম্যান মারা গেলে তার স্ত্রীকে উত্তরাধিকার ঘোষনা করা যায় না। নির্বাচনের মাধ্যমে যিনি জয়ী হবেন তিনিই চেয়ারম্যান হয়ে পরিষদ চালাবেন।কিন্তু বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য মনজুরুল হক লাভলু যেটা ঘোষনা করেছেন সেটা আইন পরিপন্থি।
এ ব্যাপারে মুকসুদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষযক সম্পাদক হায়দার হোসেন বলেন, খন্দকার মনজুরুল হক লাভলু বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য। কেউ মারা গেলে তার পরিবারকে সমবেদনা জানাতে পারেন।কিন্তু কাউকে ইউনিয়ন পরিষদের উত্তরাধিকারী ঘোষনা দিতে পারেন না। সেই সাথে একজন বিএনপি নেতার স্ত্রীকে প্রার্থী হবার ঘোষনাও দিতে পারেন না। এটা আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র বিরোধী কাজ। তিনি এর আগে ইউপি নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীকে হারানোর জন্য কাজ করেছেন। তিনি যেটা করেছেন তা ঠিক হয়নি।
মুকসুদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক সাইদুর রহমান টুটুল বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য হয়েও বিএনপির কোন নেতা মারা গেলে তিনি তার অনুভূতি জানাতে পারেন,শোক জানাতে পারেন। কিন্তু কোন সভায় যোগ দিয়ে বক্তব্য দিতে পারেন না। এতে উপজেলা আওয়ামী লীগ বিব্রতবোধ করছেন। তিনি কি ভাবে বিএনপির নেতার স্ত্রীকে প্রার্থী হিসাবে ঘোষনা দিয়ে আসেন। এ বিষয়টি আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনার কাছে জানানো হবে। এরপর সিদ্ধান্ত তিনি নিবেন।
মুকসুদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রবিউল আলম সিকদার বলেন, বিএনপি নেতার স্ত্রীকে তিনি প্রার্থী হিসাবে ঘোষনা দিয়েছেন এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। তিনি এর আগেও আওয়ামী লীগের বিরোধীতা করেছেন। তিনি এলাকায় আসলে বিএনপি নেতা কর্মীদের সাথে নিয়ে চলেন। তিনি নাকি আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হবেন। তিনি কি বিএনপি নেতা কর্মীদের সাথে নিয়ে নির্বাচন করবেন তা আমার বোধগম্য নয়। কারন জলিরপাড় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আমাদের নেত্রী প্রার্থী দিবেন। তিনি এর বিরোধীতা করেছেন। তিনি কিভাবে আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য হন এটা আমার বুঝে আসে না। আমি নেত্রীর কাছে দাবী জানাই এমন নেতাদের যেন দল থেকে বহিস্কার করা হয়।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য ও অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালক খন্দকার মনজুরুল হক লাভলু বলেন, মিহির কান্তি রায় আমার এলাকার একজন হিন্দু কমিউনিটির নেতা। তিনি বিএনপি বা আওয়ামী লীগ করেন সেটি কোন বিষয় না। আমি যখন কলেজে ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছি, সেও তখন ছাত্র রাজনীতি করেছেন। হিন্দুদের মধ্যে তার ব্যাপক গ্রহন যোগ্যতা রয়েছে। যেহেতু আমার সাথে তার ভালো সম্পর্ক ছিল এবং তিনি হিন্দু কমিউনিটির নেতা তাই তার বাড়ীতে গিয়ে সমবেদনা জানিয়েছি।
মুকসুদপুর উপজেলা বিএনপির আহবায়ক আঃ সালাম খান বলেন, জলিরপাড় ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মিহির কুমার রায় আমাদের আগের কমিটির সহ-সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আমি ওই কমিটির সাধারন সম্পাদক ছিলাম। বর্তমান আহবায়ক কমিটিতে মিহির কুমার রায় যুগ্ম আহবায়ক হিসাবে পদ পেয়েছেন কিনা সেটা আমার জানা নেই।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালে ২৮ নভেম্বর জলিরপাড় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার প্রার্থী শ্রীমতি বিভা রানী মন্ডলকে পরাজিত করে মিহির কান্তি রায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনি রাজনৈতিক জীবনে মুকসুদপুর উপজেলা বিএনপির সক্রীয় নেতা ছিলেন। তিনি গত ৪ জুন সকালে মারা যান।