মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:৪৫ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: আমি জীবনভর নজরুলচর্চা করছি’ এ খবরটি আজকে বাংলাদেশের আনাচে-কানাচেতে পৌঁছে গিয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তথা ফেসবুকের কল্যাণে। বাংলাদেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশের বাংলাভাষী মানুষরাও কমবেশি জানেন খবরটি। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এমনটি কীভাবে সম্ভব হলো।
মানুষ যা-ই ভাবুক, আমার নজরুলচর্চার বয়স তিন যুগের বেশি নয়। ১৯৮৬ সালে ভিডিপি তরফে “অগ্নিবীণা ক্লাব” বানিয়ে যেখান থেকে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড শুরু করেছিলাম, সেখানেই আজকে হয়েছে “একটি নজরুল চেতনার বাতিঘর–
ঘ রা মি ঘ র।” নড়াইলের বিছালী গ্রামে এটি আমার জন্মস্থান বা পৈত্রিক ঠিকানা। ইদানিং ঘ রা মি ঘ র দেখতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এখানে আসছেন এবং নজরুলে শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন।
জেলার ডিসি-এসপি ছাড়াও সরকারের উচ্চ মহলের অনেক সংস্কৃতিবোদ্ধাজন ঘ রা মি ঘ রে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে এসেছেন, বক্তব্য দিয়েছেন। নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক নজরুল-অন্তপ্রাণ মোহাম্মদ জাকীর হোসেন সরাসরি এসে ঘ রা মি ঘ র পরিদর্শনও করেছেন। তাঁরা সবাই সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং নড়াইলের প্রত্যন্ত জনপদে নজরুল চর্চার এই গতিমুখিতার ভুয়সী প্রশংসা করেছেন। এবং তাঁরা বলেছেন, এ পথেই নজরুলের মানুষদের কাছে নজরুলকে নিয়ে যেতে হবে। *ঘ রা মি ঘ র প্রতিষ্ঠাতা* হিসেবে আমার ক্ষুদ্র জীবনে যা অনেক বড়ো সাফল্য বলে মনে করি।
নড়াইলের বিছালী গ্রামের এই ঘ রা মি ঘ র নিয়ে আফসোসও আছে অনেক। তার সবিস্তার এখানে বলা যাবে না সঙ্গত কিছু কারণে। কেবলমাত্র আভাসে-ইঙ্গিতে গুটিকয়েক তথ্য উপস্থাপন করা যায়।
বিষয়গুলোর প্রতি সকলের মনোযোগ আকর্ষণ ও যথাযথ প্রতিবিধান দাবি করছি :
ক) বিছালী গ্রামে আজতক মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ছাপ পড়েনি একটুও! স্কুল-মাদ্রাসা-মসজিদ-ঈদগাহ-এতিমখানা সবকিছু পরিচালিত হয় মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের দ্বারা!
খ) বর্তমান ২৫শ ভোটারের বিছলী গ্রামে একজন মুক্তিযোদ্ধাও নেই ; অতীতেও ছিলো না!
গ) বিছালী গ্রামের প্রথম বিদ্যালয়ের নামে ১ একর ৮ শতক জমি দানকারীর পুত্র সুনীল ঠাকুরসহ অনেককে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে রাজাকার বাহিনী!
ঘ) বিছালী গ্রামের দুঃখিনী মায়ের একমাত্র পুত্র নিজামুদ্দিনকে খুন করে ভয়ঙ্কর নাওসানা শ্মশানে পুতে রাখে রাজাকার বাহিনী!
ঙ) বিছালী গ্রামের বামপন্থী ধারার মুক্তিযোদ্ধা দুই সহোদর আজাহার ও কুটু মল্লিককে প্রকাশ্যে খুন করে রাজাকার বাহিনী!
চ) হিন্দুদের ওপর অত্যাচার-নিপীড়ন বিরোধী চাঁদ আলী শেখ (একাত্তরে ‘মেঝ ভাই’ খ্যাত) ও তাঁর বংশীয় সকলের ঘরবাড়ি আগুন ধরিয়ে দিয়ে লুট করে রাজাকার বাহিনী!
ছ) বিছালী গ্রামের রাজাকারদের পুকুরপাড়ে এক গর্তে চারজনকে জ্যান্তকবর দেয়া হয় ; যা অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্য!
জ) এই গ্রামের চিহ্নিত রাজাকারের সন্তান টাকার জোরে হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক হয়ে অনেক ছাত্রীর ইজ্জত লুটেছে ; গ্লানী এড়াতে এস.এস সি পরীক্ষার্থী হিন্দু কিশোরীর আত্মহত্যার ঘটনা সবাই জানলেও কেউ টু শব্দ করতে সাহস পায়নি!
ঝ) রাজাকারপুত্র প্রধান শিক্ষক হওয়ার পর বিছালী হাইস্কুলের প্রতিষ্ঠাতা আবুবক্কার মোল্যার নাম গায়ের জোরে মুছে ফেলে এবং উপর্যুপরি ৭ বছর ম্যানেজিং কমিটিতে তাঁকে না নিয়ে ‘প্রতিষ্ঠাতা নাই’ বলে চালিয়ে দেয়। তবে, বর্তমান কমিটিতে আবুবক্কার মোল্লাকে পুনরায় “প্রতিষ্ঠাতা” হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করতে বাধ্য হয়েছে!
ঞ) বিছালী গ্রামের পুলিশ ফাঁড়ি ‘ঠুটোঁ জগন্নাথ’ হয়ে থাকে। এছাড়া কার্যত করার কিছু থাকে না তাদের!
আমি আমার মরহুম মা-বাবার একমাত্র পুত্রসন্তান। আমি এখন দুই পুত্র, এক কন্যার জনক। যশোরের সাপ্তাহিক সোনালী দিন পত্রিকা আমার সম্পাদনায় প্রকাশিত হচ্ছে গত একত্রিশ বছর। সাংবাদিকতায় অনেক সাহস দেখিয়ে আজো বেঁচে আছি। কখনো “মিথ্যা সংবাদ” লেখার অভিযোগ ওঠেনি। এখন আমার তিন সন্তানই সাংবাদিক; কন্যা সানজিদা সাফরিন গ্রীণ ইউনিভার্সিটিতে সাংবাদিকতা পড়ছে। সুতরাং কাউকে ভয় করে চুপ থাকার প্রশ্ন ওঠে না আর।
আজ থেকে নতুন অভিযান শুরু হলো। এ জনপদকে মানুষের বাসযোগ্য করতে চাই। তবে, এ পথ কুসুমাস্তীর্ণ নয়– তা জানি। অতএব, যারা আমাকে থামিয়ে দিতে চাইবে; এমন অন্তত ১৩ জনের একটি তালিকা প্রস্তুত করে স্বজনের কাছে রাখছি। বাদবাকি আল্লাহ মালিক।
পরিশেষে ফিরে আসি মুর্শিদের চিরন্তনী বাণীর ছায়াতলে:
“হে দারিদ্র্য, তুমি মোরে করেছ মহান!
তুমি মোরে দানিয়াছ খ্রিষ্টের সম্মান;
কণ্টক-মুকুট শোভা দিয়াছ, তাপস–
অসংকোচ প্রকাশের দুরন্ত সাহস।
উদ্ধত উলঙ্গ দৃষ্টি, বাণী ক্ষুরধার
বীণা মোর শাপে তব হলো তরবার!”