রাজশাহী প্রতিনিধি : রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চন্ডিপুর গরু হাটটি গত মাসে ১ লক্ষ ৯৫ হাজার টাকায় ইজারা দেওয়া হয়। এ মাসে ওই হাটের ইজারামূল্য উঠেছে ৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা। যে কারোরই প্রথমে মনে হতে পারে, পড়ায় ভুল হয়েছে। এক মাসে একটা গো-হাটের ইজারামূল্য এত গুণ বেড়ে যায় কী করে?
কিন্তু না। কোথাও কোন ভূল হয় নি। এটাই বাস্তবতা।
পৌর তথ্যানুযায়ি জানা যায়, বাঘা পৌরসভার অন্তর্গত চন্ডিপুর গরু হাট এবং বাঘা হাট ইজারার ঘোষনা মোতাবেক গত সোমবার ( ১৩ ফেব্রুয়ারি ) বেলা তিনটায় ইজারার কার্যক্রম শুরু হয়। সদ্য নির্বাচিত মেয়র আক্কাছ আলীর সভাপতিত্বে চন্ডিপুর গরু হাট ইজারা ডাকে অংশগ্রহণ করেন ১১ জন। তার মধ্যে মো.দুলাল হোসেন সর্বোচ্চ ৪ লক্ষ ৭০ হাজার টাকায় আগামী এক মাসের জন্য ইজারা নেন। তার নিকটতম ডাককারি ছিলেন জাহাঙ্গীর আলম ৪ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। এই হাটের গত মাসের ইজারা দিয়ে গেছেন তখনকার মেয়র আব্দুর রাজ্জাক। যার ইজারামূল্য ছিল ১ লক্ষ ৯৫ হাজার টাকা। তাতে করে বর্তমানের ইজারা মূল্য অনুযায়ী পৌরসভার রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। অপরদিকে বাঘার হাট ইজারায় অংশ নেয় ৯ জন। এদের মধ্যে মো.সজল হোসেন সর্বোচ্চ ৩ লক্ষ ২০ হাজার টাকা ডেকে ইজারা গ্রহন করেছেন। গত মাসে ডাক ছিলো ২ লক্ষ ৫ হাজার টাকা। এ হাটেও সরকার রাজস্ব হারায় ১ লক্ষ ১৫ হাজার টাকা। এক মাসে দুই হাট মিলে সরকার মোট রাজস্ব হারায় ৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা।
এদিকে সদ্য দায়িত্ব প্রাপ্ত মেয়র আক্কাছ আলীর অধিনে প্রথম মাসেই রাজস্ব বৃদ্ধির কারন অনুসন্ধানে গিয়ে জানা যায় আসল রহস্য।
বাঘা পৌরসভার নির্বাচনে সাবেক মেয়র আক্কাছ আলী বিপুলভোটে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পরই পৌরসভায় শুরু হয়েছে শতভাগ সচ্ছতা। বেড়েছে সকল কাজের গতি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পৌরসভার এক কর্মকর্তা বলেন, গত ২০১৭ সালের নির্বাচনে জামায়াত বিএনপি সমর্থিত মেয়র আব্দুর রাজ্জাক বিজয়ী হওয়ার পর
আওয়ামীলীগের কিছু নেতার পৃষ্ঠপোষকতায় আব্দুর রাজ্জাক পৌরসভার অর্থ আত্বসাতসহ নানাবিধ দুর্নীতি শুরু করেন।
তিনি মেয়র হবার পর থেকেই এখানকার টেন্ডার/ ইজারাসহ সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করতেন ক্ষমতাসীন দলের প্যানেল মেয়র শাহিনুর রহমান পিন্টু। সে ধারাবাহিকতায় গত পাঁচ বছর বাঘা পৌরসভার সমস্ত কিছু দেখভাল করতেন মেয়র আব্দুর রাজ্জাক ও প্যানেল মেয়র শাহিনুর রহমান পিন্টু । তাঁরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন পন্থায় রাষ্ট্রীয় সম্পদের অর্থ তছরুপ করেছেন।
স্থানীয়রা জানান, হাটের ইজারার সময় ইজারার জন্য দরপত্র জমা দিতে বাধা দেওয়া হতো। তারা ইচ্ছেমত হাট ডেকে নিতেন এবং হাটের টাকা অদ্যাবধি পৌরফান্ডে জমা হয়নি।
নব নির্বাচিত মেয়র আক্কাছ আলি বলেন, আমি পৌরসভার দ্বিতীয় মেয়াদে যখন মেয়র ছিলাম তখন এ পৌরসভাকে তৃতীয় শ্রেনী থেকে পর্যায়ক্রমে প্রথম শ্রেনীতে রুপান্তরসহ নানাবিধ উন্নয়ন করেছিলাম। পরে ২০১৭ সালে নির্বাচন হয়। ওই নির্বাচনে কিছু ষড়যন্ত্রকারী আমাকে পরাজিত করে জামায়াত বিএনপির প্রার্থীকে বিজয়ী করে। তারপর থেকেই পৌরসভার উন্নয়ন থমকে যায়। মেয়াদ শেষে গত ২৯ ডিসেম্বর (২০২২) নির্বাচনে পৌরবাসী আমাকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করে। প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকার দেনাসহ পৌরসভার দায়িত্ব গ্রহন করি। গতকাল হাট বাজারের ডাক সম্পুন্ন হয়েছে। এতে সরকারের রাজস্ব বহুগুণ বেড়েছে। আগে হয়তো বিভিন্ন কারণে টেন্ডার জমা পড়তনা। ইচ্ছে থাকলেও অনেকে ডাকে অংশ নিতে পারতনা। এখন সবার জন্য উন্মুক্ত। তাই অনেকেই টেন্ডার ড্রপ করতে পারছেন। হাটের ইজারার যে মূল্য হয়েছে এটা সন্তোষজনক। এটা একবার নির্ধারিত হয়ে গেলে আর হয়তো নিচে আসবে না। এতে মুলত সরকার লাভবান হবে।