নিজস্ব প্রতিবেদক:“বাংলাদেশ আমার অহংকার” এই শ্লোগান নিয়ে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে জোড়ালো ভূমিকা পালন করে আসছে।
র্যাব সৃষ্টিকাল থেকে সমাজের বিভিন্ন অপরাধ এর উৎস উদঘাটন, অপরাধীদের গ্রেফতারসহ আইন
শৃঙ্খলা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। র্যাব-৭, চট্টগ্রাম অস্ত্রধারী
সস্ত্রাসী, ডাকাত, ধর্ষক, দুর্ধষ চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, খুনি, ছিনতাইকারী, অপহরণকারী ও প্রতারকদের
গ্রেফতার এবং বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও মাদক উদ্ধারের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি
অবলম্বন করায় সাধারণ জনগনের মনে আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
গত ১০/১৫ দিন পূর্বে নিহত ভিকটিমের পরিবারের গৃহ পালিত গরুর খুঁটিসহ রশি ক্ষেত
থেকে চুরি হয়ে যায়। এরপর গত ১৬ ডিসেম্বর ২০২২ইং তারিখ সকাল ১১০০ ঘটিকার সময় নিহত
ভিকটিমি পূর্বের ন্যায় তাদের গৃহপালিত গরু নিয়ে ক্ষেতে গিয়ে দেখতে পায় যে, মোঃ শফিকুল
ইসলাম নামের এক ব্যক্তি তাদের চুরি হওয়া রশি দিয়ে তার গৃহপালিত গরু বেঁধে রেখেছে। তখন ১নং
ভিকটিম মৃত জালাল উদ্দিন উক্ত ব্যক্তির নিকট রশি কোথায় পেয়েছে বলে জিজ্ঞাসাবাদ করলে মোঃশফিকুল ইসলাম এর সাথে তর্ক বিতর্ক হয় এবং একপর্যায়ে মোঃ শফিকুল ইসলাম নিহত ভিকটিম মৃত জালালকে মারধর করে। ভিকটিমের চিৎকার শুনে লোকজন এগিয়ে আসলে মোঃ শফিকুল ইসলাম ভিকটিমকে সুযোগমত দেখে নিবে বলে হুমকি ধামকি প্রদান করে চলে যায়। পরবর্তীতে ঐদিন বিকাল আনুমানিক ১৫৪৫ ঘটিকার সময় মোঃ শফিকুল ইসলামসহ তার তিন ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে হাতে ধাঁড়ালো ছোরা, কিরিচ, গাছের লাঠি, লোহার রড ইত্যাদি দেশীয় তৈরী অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানাধীন ১০ নং পদুয়া ইউনিয়নের ০৬ নং ওয়ার্ডস্থ পশ্চিম খুরুশিয়া মধ্যম পাড়া রাস্তার উপর এসে অতর্কিতভাবে নিহত ১নং ভিকটিম জালালকে মারধর করে। সে সময় মোঃ শফিকুল ইসলামের ১ম ছেলে মোঃ খোরশেদ আলম এর হাতে থাকা ধাঁড়ালো ছোরা দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে ১নং ভিকটিম জালালের বুকের বাম পাশে আঘাত করলে সাথে সাথে চিৎকার দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
ভিকটিমের ছেলের চিৎকার শুনে তার অপর ভাই নিহত ২নং ভিকটিম কামাল হোসেন এগিয়ে গেলে তখন মোঃ শফিকুল ইসলামের ২য় ছেলে মোঃ মোর্শেদুল আলম এর হাতে থাকা ধাঁড়ালো ছোড়া দ্বারা বুকের বাম পাশে আঘাত করলে সাথে সাথে চিৎকার দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। তখন তাদের
চিৎকার শুনে অপরাপর আত্মীয় স্বজনরা এগিয়ে আসলে তখন মোঃ শফিকুল ইসলাম এবং তার ছেলেরা মিলে তাদের হাতে থাকা ধাঁড়ালো ছোরা, কিরিচ, লোহার রড ও গাছের লাঠি ইত্যাদি দিয়ে
এলোপাথারি ভাবে হাতে পায়ে পিঠে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধাঁড়ালো ছোরা দিয়ে আঘাত করে
উক্ত আত্মীয় স্বজনদেরকেও গুরুতর জখম করে। ততক্ষণে নিহত ১ ও ২ নং ভিকটিমের মা সংবাদ পেয়ে তাৎক্ষণিক স্থানীয় লোকজনসহ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে মোঃ শফিকুল ইসলাম তার ছেলেদেরকে নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল হতে পালিয়ে যায়।
পরবর্তীতে ১ ও ২ নং ভিকটিমের মা উপস্থিত লোকজনের সহযোগিতায় উল্লেখিত ভিকটিম
গণকে উদ্ধারপূর্বক রাঙ্গুনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তার ছেলে
১নং ভিকটিম জয়নাল উদ্দিন @ জয়নাল ও ২নং ভিকটিম কামাল হোসেন দ্বয়কে মৃত ঘোষণা করেন
এবং অপর ভিকটিমদের উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ
করেন। উক্ত ঘটনায় নিহত ১ ও ২ নং ভিকটিমের মা বাদী হয়ে চট্টগ্রাম জেলার দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া
থানায় ০৪ জন নামীয় ও ২/৩ জন অজ্ঞাতনামা করে একটি হত্যা মামলা দায়ের কওে, যার নং-০৫, তারিখ-১৭ ডিসেম্বর ২০২২ইং, ধারা-১৪৩/৩২৩/ ৩২৪/ ৩২৫/ ৩২৬/ ৩০৭/৩০২/৩৪ পেনাল কোড ১৮৬০।
ঘটনাটি নৃশংস ও লোমহর্ষক হওয়ায় মামলা রুজু হওয়ার পর থেকে উক্ত ঘটনায় সাথে জড়িত
সকল আসামীকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম তথ্য প্রযুক্তি ও ব্যাপক গোয়েন্দা নজরদারী
অব্যাহত রাখে। এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-৭, চট্টগ্রাম জানতে পওে যে, উক্ত মামলার এজাহার নামীয় ৪নং আসামী মোঃ সাইফুল ইসলাম @ সাইফু (৪২), পিতা- মোঃ শফিকুল ইসলাম, সাং-পশ্চিম
খুরুশিয়া, থানা- দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া, জেলা- চট্টগ্রাম আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে গ্রেফতার
এড়ানোর জন্য চট্টগ্রাম মহানগরীর বন্দর থানাধীন পূর্ব নিমতলা ডিয়ারপাড়া একটি বিল্ডিং এর
৪র্থ তলায় আত্মগোপন করে আছে। উক্ত সংবাদের ভিত্তিতে গত ২০ ডিসেম্বর ২০২২ইং তারিখ রাত
২৩৩০ ঘটিকার সময় বর্ণিত এলাকায় অভিযান পরিচালনা কওে উক্ত আসামীকে গ্রেফতার করা হয়।
পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত আসামী উল্লেখিত হত্যা মামলার ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা
স্বীকার করে এবং তার দেয়া তথ্যমতে চট্টগ্রাম মহানগরের বন্দর থানাধীন বেচাশাহ রোডস্থ পশ্চিম
গোসাইল ডাংগা একটি বাড়ি হতে উক্ত মামলার এজাহার নামীয় ২নং আসামী মোঃ মোর্শেদুল
আলম (২২), পিতা- মোঃ শফিকুল ইসলাম, সাং- পশ্চিম খুরুশিয়া, থানা- দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া, জেলা-
চট্টগ্রাম কে অদ্য ২১ ডিসেম্বর ২০২২ইং তারিখ দিবাগত রাত ০১২৫ ঘটিকায় গ্রেফতার করতে
সক্ষম হয়। পরবর্তীতে উপস্থিত স্বাক্ষীদের সামনে জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামীদ্বয়ের
উল্লেখিত নৃসংশ হত্যার ঘটনার সাথে জড়িত থাকার সত্যতা স্বীকার করে।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায় যে, তারা দীর্ঘদিন যাবৎ কুমিল্লা
জেলার সীমান্তবর্তী এলাকা হতে মাদকদ্রব্য সরবরাহকারী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মাদকদ্রব্য সংগ্রহ করে আসামীরা একে অপরের যোগসাজশে অধিক লাভের আশায় ফেনী ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে নিয়ে আসছিল বলে স্বীকার করে। উদ্ধারকৃত মাদকদ্রব্যের আনুমানিক মূল্য ০৫ লাখ টাকা।
গ্রেফতারকৃত আসামী এবং উদ্ধারকৃত মাদকদ্রব্য সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।