বৃহস্পতিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৩, ০৭:২৮ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক:-“বাংলাদেশ আমার অহংকারচ্ এই স্লোগান নিয়ে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে জোড়ালো ভূমিকা পালন করে আসছে।
র্যাব সৃষ্টিকাল থেকে সমাজের বিভিন্ন অপরাধ এর উৎস উদঘাটন, অপরাধীদের গ্রেফতারসহ আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে।
র্যাব-৭, চট্টগ্রাম অস্ত্রধারী সস্ত্রাসী, ডাকাত, ধর্ষক, দুর্ধষ চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, খুনি, ছিনতাইকারী, অপহরণকারী ও প্রতারকদের গ্রেফতার এবং বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও মাদক উদ্ধারের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করায় সাধারণ জনগনের মনে আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
ধৃত আসামী মোঃ আলাল @ দুদু মিয়া এবং তার স্ত্রী চট্টগ্রামে একটি গার্মেন্টস এ চাকুরী করত এবং চাকুরীর সুবাধে চট্টগ্রামে বসবাস করত। তাদের দাম্পত্য জীবনে ২২ মাস বয়সী একটি কন্যা সন্তান ছিল। ভিকটিম শিশু কন্যা সন্তানটি তার নানীর কাছে রংপুরে থাকত।
২০১৬ সালে পবিত্র ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষ্যে আলাল তার স্ত্রীকে নিয়ে শ্বশুর বাড়ি রংপুরে বেড়াতে যায়। গত ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ খ্রিঃ তারিখে অনুমান ১৩.০০ ঘটিকার সময় আলাল তার মেয়েকে নিয়ে তাদের বাড়িতে বেড়ানোর কথা বলে নিয়ে যায়। বিকাল বেলা মেয়েকে নিয়ে ফিরে আসার কথা থাকলেও আলাল ফিরে না আসায় ভিকটিমের নানী মোবাইলে যোগাযোগ করলে সে কিছুক্ষণের মধ্যে আসবে বলে জানায় এবং নাতনীর সাথে তাকে কথা বলিয়ে দেয়। রাত অনুমান ২০.০০ ঘটিকায় ভিকটিমের মামা শুভ তার মোবাইল হতে আলালকে ফোন করলে ফোন রিসিভ করে সে উল্টা-পাল্টা কথা বলে। আলালের অসংলগ্ন কথা শুনে ভিকটিমের নানী এবং মামা আলালের বাড়িতে গিয়ে তাকে না পেয়ে তার মা, বাবা, ভাই এবং ভাবীকে জিজ্ঞেস করিলে তারাও আলালের ব্যাপারে কিছু বলতে পারে না। আলালের বড় ভাই দুলাল@ঝন্টু তার মোবাইলে ফোন করে তার অবস্থান জিজ্ঞেস করলে সে কোন তথ্য দেয়নি তবে চলন্ত বাসের শব্দ শুনা যাচ্ছিল।
পরবতর্ীতে ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ খ্রিঃ তারিখ বিকাল অনুমান ১৫.০০ ঘটিকায় রংপুর জেলার কোতয়ালী থানাধীন তাজহাট এলাকায় একটি কলা বাগানে ছোট-ছোট বাচ্চারা খেলাধূলা করার সময় একটি শিশু কন্যার লাশ দেখে চিৎকার করলে আশে-পাশের লোকজন এগিয়ে আসে। উক্ত সংবাদ পেয়ে ভিকটিম শিশুটির মা, নানী এবং আত্মীয় স্বজন এসে লাশটি তাদের ২২ মাস বয়সী শিশু কন্যা বলে সনাক্ত করে। ভিকটিম শিশুটির শরীরের বিভিন্ন স্থানে পোকা ধরা, গলায় একটি দাগ এবং কান ও নাক দিয়ে রক্ত বের হওয়ার দাগ ছিল। এ ঘটনায় ভিকটিম শিশুটির নানী বাদী হয়ে রংপুর জেলার কোতয়ালী থানায় মোঃ আলাল এবং আরও ৫জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন যার মামলা নং -৫৩, জিআর-৭৮৮/১৬, তারিখ-১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ইং ধারা-৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড। বাবা কতর্ৃক নিজ সন্তানকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনাটি সেই সময় ব্যাপক আলোড়ন ও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে৪। পরবতর্ীতে রংপুর থানা পুলিশ আসামী মোঃ আলালকে গ্রেফতার করে গত ২৬ অক্টোবর ২০১৬ইং তারিখে বিজ্ঞ আদালতে সোর্পদ করে। গ্রেফতারকৃত আসামী নিজ হাতে তার ২২ মাস বয়সী শিশু কন্যাকে হত্যা করেছে মর্মে বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দীতে স্বীকার করে।
নিজের ২২ মাস বয়সী শিশু কন্যাকে নির্মমভাবে হত্যার দায়ে বিজ্ঞ আদালত আসামী মোঃ আলাল দুদু মিয়াকে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করে।
বিশেষ গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম জানতে পারে যে, চাঞ্চল্যকর ও আলোচিতবাবা কতর্ৃক ২২ মাস বয়সী নিজ শিশু কন্যাকে হত্যা মামলার মৃত্যুদন্ড সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী চট্টগ্রাম মহানগরীর খুলশী থানাধীন পশ্চিম খুলশী এলাকায় আত্নগোপন করে আছে। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে বর্ণিত আসামীকে গ্রেফতারে লক্ষ্যে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম ব্যাপক গোয়েন্দা নজরদারী অব্যাহত রাখে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৩ অক্টোবর ২০২২খ্রিঃ তারিখ আনুমানিক ০৩৩০ ঘটিকার র্যাব-৭, চট্টগ্রামের একটি আভিযানিক দল বর্ণিত এলাকায় ব্যাপক অভিযান পরিচালনা করে আসামী মোঃ আলাল @ দুদু, পিতা -মোঃ মোসলেম উদ্দিন@প্লান্টু, সাং-কিশামত, থানা-কোতয়ালী, জেলা- রংপুরকে আটক করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে উপস্থিত স্বাক্ষীদের সামনে আটককৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে বর্ণিত মামলার মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী মর্মে স্বীকার করে।
ধৃত আসামীকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায়, উক্ত হত্যা কান্ডের ঘটনায় গ্রেফতার হওয়ার পর বিচার চলাকালীন সময়ে সে বিজ্ঞ আদালত থেকে জামিন নিয়ে বের হয়। জামিন পেয়ে সে এলাকা ছেড়ে চট্টগ্রাম এসে নিজেকে আত্মগোপন করে। জামিনে বের হওয়ার পর সে আর আদালতে হাজীরা দেয়নি এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধরা-ছোয়ার বাইরে চলে যায়। উক্ত আসামীকে গ্রেফতার করার পর বাদী পক্ষ র্যাবের প্রতি গভীর সন্তোষ প্রকাশ করেন।
গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।